পরিষ্কার হয়েছে রামপুরা খাল
অবশেষে রামপুরা খালের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়েছে। দীর্ঘদিন বারোয়ারি বর্জ্যে খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ ছিল। খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার হলেও তা পরিষ্কার করেছে বনশ্রী কল্যাণ সমিতি ও ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড। তবে কঠিন বর্জ্য পরিষ্কার করা হলেও প্রতিনিয়ত তরল পয়োবর্জ্য মিশছে খালে।
ওয়াসার সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, ইস্টার্ন হাউজিং খালের ওপর একাধিক বাঁশের সাঁকো তৈরি করায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে ময়লা জমেছিল। তাই হাউজিং কর্তৃপক্ষই খালটি পরিষ্কার করেছে।
রামপুরা খালের দুরবস্থা নিয়ে প্রথম আলোয় বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন খালটি দখলমুক্ত ও পরিষ্কার করার দাবিতে নানা সময়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
কিছুদিন আগেও রামপুরা সেতু থেকে বনশ্রী প্রধান সড়ক ধরে এগোতে থাকলে খালে ময়লা ছাড়া কিছুই চোখে পড়ত না। আফতাবনগরের পাড়ের চেয়ে বনশ্রী পাড়ে আবর্জনা ছিল বেশি। পুরো পাড়ই ছিল ময়লার ভাগাড়। খালের মধ্যে আবর্জনায় ভরা বস্তাও ভাসতে দেখা যেত।
গতকাল সোমবার গিয়ে দেখা যায়, খালের বারোয়ারি বর্জ্য পরিষ্কার করা হয়েছে। ভাসমান ময়লা পরিষ্কার করায় পানিপ্রবাহ বেড়েছে। রামপুরা সেতু থেকে বনশ্রী প্রধান সড়ক ধরে এগোতে থাকলে মেরাদিয়া বাজার পর্যন্ত খালে কোনো ময়লা চোখে পড়ে না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিসেম্বরে বনশ্রী কল্যাণ সমিতি ও ইস্টার্ন হাউজিংয়ের পক্ষ থেকে খাল পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। খালের কঠিন বর্জ্য পরিষ্কার করা হলেও পয়োবর্জ্যের সংযোগ থাকায় খাল থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
এ বিষয়ে বনশ্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, খালপাড়ের কঠিন বর্জ্যগুলো কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে পরিষ্কার করা হয়েছে। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে হাঁটার জায়গা করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। খালে ময়লা না ফেলতে জনগণকে সতর্ক করে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে।
দেখা যায়, খালের পাড়ে কিছুদূর পর পর খালে ময়লা না ফেলতে অনুরোধ জানিয়ে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। বনশ্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে লাগানো সাইনবোর্ডে খালে ময়লা ফেললে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করার কথাও বলা হয়েছে। মেরাদিয়া বাজার এলাকায় ইস্টার্ন হাউজিং কর্তৃপক্ষ ‘এখানে ময়লা ফেলা সম্পূর্ণরূপে নিষেধ’ লেখা সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে।
ওয়াসার সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে বলা হয়, ওয়াসা খাল পরিষ্কার করেনি। খালের আশপাশের বাসিন্দাদের ফেলা ময়লা খালে জমেছিল। খালের ওপরে একাধিক বাঁশের সাঁকো বানানোয় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে ময়লা আটকে ছিল। ইস্টার্ন হাউজিং কর্তৃপক্ষ ও বনশ্রী কল্যাণ সমিতি খালটি পরিষ্কার করেছে।
রামপুরা সেতুর নিচে পৃথক দুটি নর্দমা দিয়ে গুলশান, বাড্ডা, তেজগাঁও, রামপুরা, মগবাজার, কারওয়ান বাজার এলাকার গৃহস্থালি ও পয়োনালার পানি মিশছে এই খালে। বর্জ্য থেকে উৎপন্ন গ্যাস বুদ্বুদের মতো উঠে পানিতে ফেনার সৃষ্টি করেছে।
দেখা গেছে, মেরাদিয়া বাজার-সংলগ্ন স্থানে রামপুরা খালের বেশ কিছু অংশে এখনো ময়লা ফেলা হচ্ছে। সেখানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুটি ময়লার কনটেইনার থাকলেও বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা ময়লার অধিকাংশ খালে ফেলা হচ্ছে। মেরাদিয়া হাটের ফলমূল ও শাকসবজি বিক্রেতারাও হাটের বর্জ্য খালেই ফেলছেন।
মেরাদিয়া বনশ্রী কাঁচাবাজারের বিপরীত পাশে খালের পাড় ঘেঁষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দুটি ময়লার কনটেইনার রাখা। ময়লা-আবর্জনা কনটেইনার উপচে ছড়িয়ে আছে চারদিকে। আবর্জনা সংগ্রহের গাড়িতে করে বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি থেকে আবর্জনা নিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা আসছেন। কনটেইনারে জায়গা না পেয়ে তাঁরা খালের পাড়েই আবর্জনা নামাচ্ছেন।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বনশ্রীর কিছু অংশ, দক্ষিণ বনশ্রী, মেরাদিয়া, ভূঁইয়াপাড়া, মাদারটেক এবং এর আশপাশের এলাকা থেকে সংগ্রহ করা আবর্জনা রামপুরা খালের এ অংশে ফেলা হয়।
যোগাযোগ করা হলে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে বলা হয়, মেরাদিয়া এলাকায় বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা আবর্জনা রাখার জন্য পাঁচ কাঠা জায়গার ওপরে একটি আবর্জনা রাখার ঘর (এসটিএস) নির্মাণের কাজ চলছে। এটি নির্মিত হলে খালের পাড়ে কোনো আবর্জনার কনটেইনার থাকবে না।