পরিকল্পনাকারী কারা ছিল জানতে পারেনি পুলিশ

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলনের সময় গত বছরের ৮ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ফাইল ছবি
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলনের সময় গত বছরের ৮ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ফাইল ছবি
>

• গত বছরের ৮ এপ্রিল রাতে উপাচার্যের বাসভবনে হামলা হয়
• ঘটনার এক দিন পর ১০ এপ্রিল শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের
• মামলায় অজ্ঞাতনামা কয়েক শ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়
• কয়েক শ হামলাকারীর একজন সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত
• হামলাকারী হিসেবে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে
• একজন দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা কাদের পরিকল্পনায় হয়েছিল, তা বের করতে পারেনি পুলিশ। আর হামলাকারী হিসেবে যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে মাত্র একজন দায় স্বীকার করেছেন। কবে এই মামলার তদন্ত শেষ হবে, সে সম্পর্কেও পুলিশ কিছু বলতে পারছে না।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলনের সময় গত বছরের ৮ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার এক দিন পর ১০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কামরুল আহসান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে তিনি অজ্ঞাতনামা কয়েক শ ব্যক্তিকে আসামি করেন বলেন, এতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দুই কোটি টাকা।

হামলার জন্য সব সময়ই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাঁদের শনাক্ত করা হচ্ছে বলেও সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়। এমনকি ৬ জানুয়ারি ছাত্রলীগ সভাপতি মো. রেজানুল হক চৌধুরী শোভন প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগ নয়, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাই ওই ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত।

তবে মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের (ডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ থেকে শনাক্ত করা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র সাইদুর রহমানকে সিসিটিভি ফুটেজে উপাচার্যের ভবনের ফটক ভাঙতে দেখা যায়। সাইদুর ছাড়া আর কেউ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের চারজনই বহিরাগত। তাঁরা হলেন বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসার মো. রাকিবুল হাসান ওরফে রাকিব, পুরান পিজি হোস্টেলের বাসিন্দা মাসুদ আলম ওরফে মাসুদ, বংশালের মো. আলী হোসেন শেখ এবং নিউমার্কেট এলাকার বাসিন্দা আবু সাঈদ ফজলে রাব্বী ওরফে সিয়াম। ডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, বহিরাগত যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আড্ডা দিতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাঁরা হলেন ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্সের ছাত্র মো. রাশেদ খান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র মো. আতিকুর রহমান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র মো. সাইদুর রহমান। বহিরাগত ব্যক্তিদের একজনকে শনাক্তকরণ প্যারেডের (টিআই প্যারেড) মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। ঘটনার রাতে উপাচার্যের ভবনের ফটকে দায়িত্ব পালন করছিলেন আলাউদ্দিন। এক তরুণ তাঁর মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। টিআই প্যারেডে তিনি নিজেই ওই তরুণকে শনাক্ত করেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলনের সময় গত বছরের ৮ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ফাইল ছবি
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলনের সময় গত বছরের ৮ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ফাইল ছবি

মামলার পরিকল্পনাকারী কারা, অগ্রগতি কতটুকু, জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া ও জনসংযোগ) মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত চলছে।

এদিকে মামলার বাদী কামরুল আহসান জানান, টিআই প্যারেডে একজন শনাক্ত হওয়ার পর তাঁকে জানানো হয়েছিল। এর বাইরে আর কোনো অগ্রগতির খবর তাঁর জানা নেই। 

পুলিশের নথিতে রাশেদ নির্দেশদাতা

উপাচার্যের বাসভবনে হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে পুলিশ চিহ্নিত করেছে মো. রাশেদ খানকে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক আল নাহিয়ান জয়ের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় করা মামলায় তাঁকে ১ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে ৮ এপ্রিল ভিসির বাড়িতে হামলার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালতে পুলিশ যে কাগজপত্র জমা দিয়েছে, সেখানে লিখেছে, রাশেদ স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ হাসিলের জন্য হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। আসামিদের যেন শনাক্ত করা না যায়, তাই তাঁরই নির্দেশে সিসি ক্যামেরার ডিভিআর পুড়িয়ে ফেলা হয়।

তবে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে রাশেদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেননি বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

জামিনে মুক্ত রাশেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার রাতে চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে আহত হন তিনি। তাঁর সঙ্গে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুহেল সেই ছবিও তুলে রেখেছিলেন।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়। ওই সম্মেলনেও মো. রাশেদ খানসহ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সব শিক্ষার্থীই উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি। কবে তা চূড়ান্ত হবে, সে সম্পর্কেও কিছু জানা যায়নি।