পদ্মা সেতু নির্মাণে শেখ হাসিনাকে অসমসাহসী বললেন চীনের রাষ্ট্রদূত
বিদেশি তহবিল বন্ধ সত্ত্বেও দেশি অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে অসমসাহসী বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। কোনো দেশের সাধারণ কোনো নেতার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব হতো কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
সোমবার ঢাকায় চীনা দূতাবাসে নির্বাচিত কিছু সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন লি জিমিং। তিনি বলেন, বিদেশি কিছু উন্নয়ন অংশীদার বিশ্বাসই করতে পারেনি যে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এ ধরনের একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে। তবে তিনি তাদের (উন্নয়ন অংশীদারদের) কারও নাম উল্লেখ করেননি।
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী সব সন্দেহ, চাপ ও অভিযোগের মুখে নিজেকে ইস্পাতকঠিন দৃঢ় রেখে শতভাগ বাংলাদেশের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলেন।
লি জিমিং বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের জন্য সরকারপ্রধানের পক্ষ থেকে দরকার ছিল অসীম সাহস ও দৃঢ় রাজনৈতিক দায়িত্ববোধ। এই সেতু সম্পর্কে ভাবতে গেলেই তিনটি শব্দ আমার মনে ভেসে ওঠে, তা হলো সাহস, সংকল্প ও সমৃদ্ধি।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি স্বপ্ন থেকে সেতুটি আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এখন থেকে কেউ সন্দেহ করতে পারবে না যে বাংলাদেশ পারে না।
একটি চীনা কোম্পানি সেতুটি নির্মাণে জড়িত হওয়ায় এ প্রকল্পে তাঁর দেশের অংশগ্রহণে গর্ব বোধ করেন লি জিমিং। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে বড় সেতু, যা চীনা কোম্পানিগুলো এযাবৎ চীনের বাইরে তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ‘সুতরাং আমি মনে করি, চীনের পক্ষেও এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা একটি সাহসী পদক্ষেপ।’
বিদেশি অর্থায়ন ছাড়া এই সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশ বিশ্বকে বার্তা দিতে পেরেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, এই শিক্ষাই পাওয়া গেছে যে বাংলাদেশের জনগণের ওপর আস্থা রাখা উচিত।
চীনের রাষ্ট্রদূত আপাতভাবে বিশ্বব্যাংকের রেফারেন্স টেনে বলেন, এই শিক্ষার কারণে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বাজারে তারা আরও ভালো পারফর্ম করতে পারবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, এই প্রকল্প থেকে ঋণদাতা সংস্থাগুলোর সরে দাঁড়ানোকে তিনি কোনো ষড়যন্ত্রের ফল হিসেবে দেখতে চান না।
লি জিমিং বলেন, এটি ছিল বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আস্থার অভাব, বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আস্থার অভাব। তবে পূর্বের আর্থিক কার্যক্রমের আলোকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বেইজিংয়ের পূর্ণ আস্থা ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
‘আমরা জানি, আপনারা (বাংলাদেশ) যদি বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থে কাজটা করব, তাহলে আপনারা তা করতে পারবেন। আমরা এটা বিশ্বাস করেছি এবং আমরা সঠিক আছি। তা–ই না?’ বলেন চীনের রাষ্ট্রদূত।
লি জিমিং বলেন, কেউ হয়তো এই সেতুতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অর্জন দেখতে পছন্দ না–ও করতে পারে। তিনি বলেন, সবাই খুশি না হলেও চীনের জনগণ খুশি।
চীনের নেতৃত্বাধীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে—এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় লি জিমিংয়ের কাছে। তিনি বলেন, এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে অনেক দেশে বিআরআই সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতু ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে ও এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের মিসিং লিংক হিসেবে কাজ করবে বলে জানান তিনি।
লি জিমিং আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু কেবল দুই খণ্ড ভূমিকেই সংযুক্ত করবে না। বরং এটি আমাদের জনগণের হৃদয়কে সংযুক্ত করে অভিন্ন সমৃদ্ধি ও ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে।’
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, যাতায়াতের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়ার পর এটি থেকে বাংলাদেশের জনগণ উপকৃত হবে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে এবং চীন ও বাংলাদেশের ভ্রাতৃত্বের চিরবন্ধন হিসেবে কাজ করবে।’