'পঙ্গপাল-ঝড়' দক্ষিণ এশিয়ায়, ভারতজুড়ে তাণ্ডব
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন বিপদ দেখা দিয়েছে। বঙ্গোপসাগর থেকে আসা ঝড় থেমে গেলেও পাকিস্তানের পর ভারতজুড়ে পঙ্গপালের ‘ঝড়’ শুরু হয়েছে। রাজস্তান, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্রের পর পঙ্গপালের দল দেশটির মধ্য ও উত্তর প্রদেশে একের পর এক জমির ফসল খেয়ে সাবাড় করে দিচ্ছে। এখন সেটি এগিয়ে আসছে ভোপাল ও ওডিশার দিকে। বাংলাদেশের সীমানা থেকে খুব কাছের ওই দুই প্রদেশে পঙ্গপালের হানা দেশের কৃষিবিদ ও সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে।
সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ে পঙ্গপালের ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতামূলক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কীটতত্ত্ব বিভাগ থেকে ভারতের পঙ্গপালের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থাকেও (এফএও) এ কাজে সরকার যুক্ত করেছে। পঙ্গপালের ব্যাপারে জাতীয় পর্যায়ে একটি টাস্কফোর্স ও একটি অ্যাপ তৈরির কাজও শুরু হয়েছে।
এর আগে গত বছর বাংলাদেশে আরেক ফসল ধ্বংসকারী পোকা আর্মি ওয়ার্ম আক্রমণ করেছিল। মূলত ভুট্টার জমিতে আক্রমণকারী ওই পোকাটি প্রথম বছরেই দেশের ৩১টি জেলার ভুট্টার জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। তবে সরকারের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে সেটি মাত্র ৪ শতাংশ ভুট্টার ক্ষতি করে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুরোধে এফএও থেকে বাংলাদেশে পঙ্গপালের আক্রমণের আশঙ্কা কতটুকু এবং ওই পতঙ্গটি যদি চলে আসে, তাহলে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে—এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছে এফএওর বৈশ্বিক পঙ্গপাল পর্যবেক্ষণবিষয়ক সংগঠন লুকাস্ট ওয়াচ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পঙ্গপাল আক্রমণের আশঙ্কা খুব কম। পঙ্গপাল দমনে অযথা বিষাক্ত রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার না করার ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে পঙ্গপালের আক্রমণের আশঙ্কা নেই। তবে এটি যদি আক্রমণ করে, তাহলে যাতে বড় ধরনের বিপর্যয় না ঘটে, সে জন্য মাঠপর্যায়ে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
>ভারতের ওডিশা ও ভোপালে সতর্কতা।
এই পতঙ্গের আক্রমণের আশঙ্কা বাংলাদেশে কম হলেও প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারি সংস্থাগুলো।
এদিকে সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পঙ্গপালের ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মূলত কোথাও পঙ্গপাল দেখা গেলে তা সরকারকে দ্রুত জানানোর পাশাপাশি কী ধরনের বালাইনাশক ব্যবহার করে তা দমন করতে হবে, তা নিয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তবে এফএওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গত এপ্রিলে কক্সবাজারের টেকনাফে পঙ্গপালসদৃশ একধরনের পতঙ্গ দেখা দেওয়া নিয়ে অযথা আতঙ্ক তৈরি হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের আতঙ্কে পড়ে কৃষক যাতে অযথা ফসলে রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার না করেন, সে ব্যপারে সতর্ক হতে হবে। কারণ পঙ্গপাল দমনে বিশ্বজুড়ে যেসব রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার হয়, তাতে পতঙ্গগুলো মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণের শিকার ফসল, মাঠ, পানিসহ আশপাশের পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিষাক্ত হয়ে ওঠে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের পরিচালক দেবাশীষ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, পঙ্গপাল দমনে ভারতের গুজরাটসহ বিভিন্ন রাজ্য ফসলের মাঠে হাঁস পালন বেশ কার্যকর পদ্ধতি। হাঁস প্রচুর পঙ্গপাল খেতে পারে। বাংলাদেশেও হয়তো এ বছর পঙ্গপালের আশঙ্কা কম। কিন্তু কোনো কারণে যদি এটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আক্রমণ করে, তাহলে তার প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করতে হবে। হাঁস পালনের মতো প্রাকৃতিক পদ্ধতির দিকে নজর দিতে হবে।