নৌকার পোস্টারে সয়লাব
আর মাত্র পাঁচ দিন পর একাদশ সংসদ নির্বাচন। দিন যত ঘনিয়ে আসছে নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনের বিভিন্ন এলাকা নৌকার পোস্টারে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। তবে ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার সহজে চোখে পড়ে না। আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে সরব। তবে বিএনপির নেতা–কর্মীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেকটা নীরবে।
এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। বিএনপির প্রার্থী দুইবারের সাবেক সাংসদ সামসুল আলম প্রামাণিক।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী সামসুল আলম প্রামাণিক প্রচার-প্রচারণায় তেমন সরব না থাকলেও ভোটার ও কর্মী-সমর্থকদের ভোটের দিন কেন্দ্র পাহারার ডাক দিয়েছেন।
মান্দা উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৪ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৬ জন। ২০০৮ সালের পর নতুন ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন ৫৬ হাজার ১৪৫ জন। এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন প্রার্থী। অন্য প্রার্থীরা হলেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী এস এম ফজলুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শহিদুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির (জেপি) সাইদুর রহমান, জাতীয় পার্টির (জাপা) এনামুল হক ও স্বতন্ত্র আফজাল হোসেন। তবে প্রচারণায় সক্রিয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী। অনেক ভোটার অন্যদের নাম জানেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মান্দা উপজেলা সদর থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জের প্রায় সবখানে নৌকার সাদা–কালো পোস্টারে ছেয়ে গেছে। সেই তুলনায় হাতে গোনা ধানের শীষের পোস্টার চোখে পড়েছে।
অন্তত ৩০ জন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ প্রচারণায় এগিয়ে থাকলেও অতীতের নির্বাচনগুলোর মতো এবারও এই আসনে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে চারটি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দুইবার বিএনপির প্রার্থী, একবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং একবার জামায়াতের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এ কারণে আসনটি একসময় বিএনপি-জামায়াতের দুর্গ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। তবে ২০০৮ সালের পর মন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করায় আগের চেয়ে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এবারের নির্বাচনেও আসনটি আওয়ামী লীগ ধরে রাখতে পারবে বলে তাঁদের বিশ্বাস।
আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরুর পর থেকে ইমাজ উদ্দিন গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, কর্মী ও নারী সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন।
মন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রগতি ধরে রাখতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনা ছাড়া বিকল্প নেই। গত ১০ বছরে মান্দায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন তিনি।
বিএনপির নেতা-কর্মী সূত্রে জানা গেছে, প্রচারণা শুরুর পর থেকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে পুলিশ। প্রতি রাতে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করতে তাঁদের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা না চালাতে ফোন করে এবং পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নেতা-কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। প্রচারণা শুরুর প্রথম তিন–চার দিন ধানের শীষের পোস্টার প্রায় সব জায়গায় ছিল। এরপর থেকে ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়।
বিএনপির প্রার্থী শামসুল আলম প্রামাণিক বলেন, পুলিশ প্রায় প্রতি রাতে নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। প্রচারণা শুরুর পরও নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। চার শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ধানের শীষের পক্ষে প্রচারে নামায় তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের হাতে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থায় অনেকটা নীরবে দল বেঁধে না গিয়ে নেতা-কর্মীরা দু–একজন করে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।