নেত্রকোনার ছেলেটি যেভাবে বিচারপতি থেকে রাষ্ট্রপতি
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পেমই গ্রামে ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। পড়াশোনা শেষে তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। বিচারবিভাগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপালন করেছেন তিনি। ছিলেন প্রধান বিচারপতি। পরে হন রাষ্ট্রপতি।
নব্বইয়ের আন্দোলনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বে আসেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। আবার সুপ্রিম কোর্টে ফেরার শর্ত দিয়ে এই দায়িত্ব নিতে রাজি হন তিনি।
পরে সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় সরকারের অধীন ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় সরকারপ্রধান হিসেবে তিনি বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ বেশ কিছু আইন সংশোধন করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে ভূমিকা রাখেন।
নির্বাচনের পর আবার প্রধান বিচারপতির পদে ফেরেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। এ জন্য দেশের সংবিধানেও পরিবর্তন আনতে হয়েছিল। ওই পদ থেকেই অবসরে যান তিনি।
এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলের প্রার্থী হিসেবে সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সাহাবুদ্দীন আহমদ। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্বে ছিলেন।
সাহাবুদ্দীন আহমদের বাবা তালুকদার রেসাত আহমদ ভূঁইয়া খ্যাতনামা সমাজসেবক ও জনহিতৈষী ব্যক্তি ছিলেন। সাহাবুদ্দীন আহমদ পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। ম্যাজিস্ট্রেট, মহকুমা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ সালের জুন মাসে তাঁকে বিচার বিভাগে বদলি করা হয়। তিনি ঢাকা ও বরিশালে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার নিযুক্ত হন। ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি তাঁকে বাংলাদেশ হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
১৯৮০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সাহাবুদ্দীন আহমদকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। বিচারপতি হিসেবে তাঁর প্রদত্ত বহুসংখ্যক রায় প্রশংসিত। বাংলাদেশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর ওপর তাঁর প্রদত্ত রায় দেশের শাসনতান্ত্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে এক অনন্য ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত।
সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তবে তৎকালীন সরকার তাঁর সেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।
সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৭৮ সালের আগস্ট থেকে ১৯৮২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালের ১৪ জানুয়ারি তাঁকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়।
সাহাবুদ্দীন আহমদের দুই ছেলে গুলশানের বাসায় বাবার সঙ্গেই থাকেন। তাঁর দুই মেয়ে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় সিতারা পারভীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তিনি ২০০৫ সালের ২৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে ২০১৮ সালে মারা যান সাহাবুদ্দীন আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা আহমদ (৮০)।
ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শনিবার শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।