নীরব এলাকায় দিনভর সরব যানবাহনের হর্ন

শব্দদূষণ বিধি অনুযায়ী নীরব এলাকা হিসেবে সচিবালয় এলাকাতে শব্দের মাত্রা থাকার কথা ৫০ ডেসিবেল। কিন্তু সেখানে শব্দের মাত্রা কয়েক গুণ বেশি। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় সচিবালয় এলাকায়ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

দুপুর ১২টা ১৯ মিনিট। রাজধানীর সচিবালয়–সংলগ্ন জিরো পয়েন্ট মোড়ে বসানো একটি সাউন্ড প্রেশার লেভেল (এসপিএল) মিটারে ওই স্থানের শব্দের মাত্রা পাওয়া যাচ্ছে ১২৮ দশমিক ৬ ডেসিবেল। অথচ শব্দদূষণ বিধি অনুযায়ী, নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত সচিবালয়ের ওই স্থানের শব্দের মাত্রা থাকার কথা ৫০ ডেসিবেল।


সচিবালয় এলাকায় হর্ন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে গত বছর। উচ্চ শব্দ ঠেকাতে গেল বছর দু-এক দিন অভিযান ও সচেতনতা প্রচারণা চালানোও হয়েছিল। তবে এক বছরেও এ এলাকায় উচ্চ শব্দ কমানো যায়নি। সোমবারও সচিবালয়ের চারপাশে হর্নের কারণে উচ্চ শব্দের উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকেরা।
সোমবার সচিবালয়ের চারপাশ ঘুরে মোটরসাইকেলচালক, ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস কোম্পানিগুলো এমনকি সরকারি গাড়িগুলোকে অহেতুক হর্ন দিতে দেখা গেছে।
২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় একই মাসের ১৭ ডিসেম্বর থেকে জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড়, সচিবালয় লিংক রোড হয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকাকে নীরব এলাকা (নো হর্ন জোন) হিসেবে ঘোষণা করে। হর্নের শব্দদূষণ ঠেকাতে ১৮ ডিসেম্বর চালকদের মাইকিং, প্রচারপত্র দিয়ে সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হয়। এরপরের কয়েক দিন চলে অভিযান ও দণ্ড। এরপর উদ্যোগ থেমে যায়।


পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, করোনা একটু নিয়ন্ত্রণ হলে আবার অভিযান শুরু হবে। তবে শুধু অভিযান করে উচ্চ শব্দ কমানো যাবে না। প্রয়োজন সর্বস্তরের মানুষের সচেতনতা।

২০০৬ সালের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী, নীরব এলাকায় দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা থাকবে ৫০ ডেসিবেল এবং রাতের বেলায় ৪০ ডেসিবেল। নীরব এলাকায় নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে হর্ন বাজালে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। দোষী ব্যক্তিদের প্রথম অপরাধের জন্য অন্তত এক মাস কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। পরবর্তী অপরাধের জন্য তাঁরা অন্তত ছয় মাস কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

সচিবালয় ১ নম্বর গেটের সামনে ১০৬ ডেসিবেল শব্দ, ৩ নম্বর গেটের সামনে ৯৪ ডেসিবেল, সচিবালয়ের দক্ষিণ-পূর্বে ৯৭ ডেসিবেল, সচিবালয়ের মধ্য-পূর্ব অংশে ৯১ ডেসিবেল, প্রেসক্লাবে ১০৭ ডেসিবেল ও কদম ফোয়ারায় ১০৭ ডেসিবেল পর্যন্ত উচ্চমাত্রার শব্দ পাওয়া গেছে


জিরো পয়েন্ট মোড়ে সকাল আটটা থেকে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট শাহ মো. লুৎফুল আনাম। তিনি রাত ৯টা পর্যন্ত এখানেই দায়িত্বে থাকবেন। উচ্চশব্দের কারণে তাঁর নানা সমস্যা হয় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘বাসায় গেলে আমি পরিবারের সবার সঙ্গে জোরে কথা বলি। কম আওয়াজে টিভির শব্দ শুনতে পাই না। কখনো বুকে হালকা চাপও লাগে।’


সকাল থেকে সচিবালয় ও এর আশপাশের এলাকায় শব্দের তীব্রতা নির্ণয় করছিল স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) আট সদস্যের গবেষক দল। দলটি আট দিন ধরে ওই এলাকার ১২টি স্থানে দিনের বিভিন্ন সময়ে তিন ধাপে শব্দের তীব্রতা নির্ণয় করেন। তাদের পর্যবেক্ষণে গতকাল সবচেয়ে বেশি মাত্রার শব্দ হয় সচিবালয়–সংলগ্ন জিরো পয়েন্ট মোড়ে। এখানে সর্বোচ্চ ১২৮ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ পাওয়া গেছে। এই মোড়ে সর্বনিম্ন ৭১ ডেসিবেল শব্দ পাওয়া গেছে।

গবেষকদের এসপিএল মিটারের পর্যবেক্ষণে এসেছে, সচিবালয় ১ নম্বর গেটের সামনে ১০৬ ডেসিবেল শব্দ, ৩ নম্বর গেটের সামনে ৯৪ ডেসিবেল, সচিবালয়ের দক্ষিণ-পূর্বে ৯৭ ডেসিবেল, সচিবালয়ের মধ্য-পূর্ব অংশে ৯১ ডেসিবেল, প্রেসক্লাবে ১০৭ ডেসিবেল ও কদম ফোয়ারায় ১০৭ ডেসিবেল পর্যন্ত উচ্চমাত্রার শব্দ পাওয়া গেছে।

বাসায় গেলে আমি পরিবারের সবার সঙ্গে জোরে কথা বলি। কম আওয়াজে টিভির শব্দ শুনতে পাই না। কখনো বুকে হালকা চাপও লাগে
শাহ মো. লুৎফুল আনাম, ট্রাফিক সার্জেন্ট


গবেষক দলের নেতৃত্বে ছিলেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের পরিচালক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি ও তাঁর গবেষক দল গত বছর একই স্থানে, একই সময়ে শব্দের তীব্রতা নির্ণয় করেছিলেন।


উচ্চ শব্দ কমাতে করণীয় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, হর্ন কমানো গেলে শব্দদূষণের পরিমাণ ৮০ ভাগ কমে যাবে। তবে এর জন্য কঠোর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, গাড়িচালকদের সহনশীলতা জরুরি।