নির্বাচনের পর জনপ্রতিনিধিদের আচরণ লাটের মতো: রাষ্ট্রপতি

পয়সা খরচ করে নির্বাচনে পাস করাও ঠিক নয়; আবার পাস করার পর পয়সার বিনিময়ে কাজ করে দেওয়ায় ঠিক নয়। যাঁরা জনপ্রতিনিধি, তাঁদের সততার সঙ্গে চলতে হবে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের ডাকবাংলোর মাঠে এক সুধী সমাবেশে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, জনগণের ‘কাজ করতে গিয়ে যেটা আমার করার কথা, এটা করতে গিয়ে যদি পয়সা চাই, তাহলে সেটা ঠিক নয়। আমাদের জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচনের আগে যে আচরণ থাকে, নির্বাচনে পাস করার পরে আর সে রকম থাকে না। আচরণ দেখে মনে হয় একেকজন বঙ্গের লাট হয়ে গেছে।’ তিনি জনপ্রতিনিধিদের সব সময় এক আচরণে থাকার আহ্বান জানান। এভাবে যদি জনপ্রতিনিধিত্ব করি, তাহলে দেশ আরও নিচে যাবে। এ জন্য সৎ মানুষ দেখে ভোট দেবেন। বিড়ি-সিগারেট নিয়ে জনপ্রতিনিধি না বানানোর জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের দেশে দুর্নীতি একটা বড় ফ্যাক্টর। দুর্নীতি যদি রোধ করতে হয়, তাহলে আমরা যাঁরা জনপ্রতিনিধি, প্রথম আমাদের শপথ নিতে হবে যে আমরা নিজে দুর্নীতি করব না এবং কাউকে দুর্নীতি করতে দেব না। আর সেটা যদি আমরা করতে পারি, তাহলেই আমাদের দেশ উন্নতি করবে।’ তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যাপারে প্রায়ই শোনা যায় দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতি করে ঘুষ খায়। আবার এমনও শোনা যায় যে তিনি ঘুষ খান না। তখন অন্যরা বলে যে কত অইলে খাইব। এ ধরনের কথাবার্তাও শোনা যায়। তাই জনগণ যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে সরকারি কর্মকর্তারা ঘুষ খেতে সাহস পাবেন না।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘একসময় হাওরে এক ইঞ্চিই পাকা রাস্তাও ছিল না। এখন আমরা অনেক রাস্তাঘাট করেছি। যে টাকা আমি সরকারের কাছ থেকে হাওরের জন্য আনছি, আমার এলাকা যদি এ রকম ডোবা না হইত, কিশোরগঞ্জ ও পাকুন্দিয়ার মতো উজান হতো, তাহলে সব রাস্তাঘাট হয়ে মানুষের বাড়িঘর বানানো যেত। তিনি বলেন, হাওরের সমস্যার কোনো অন্ত নেই। স্বাস্থ্যব্যবস্থা খুবই খারাপ। হাসপাতালে একজন চিকিৎসক। এ অঞ্চলে চিকিৎসাব্যবস্থা খুবই অবহেলিত। কারও যদি হার্ট অ্যাটাক হয়, তাহলে তাকে অন্যত্র নিতে নিতে রাস্তায় মারা যায়। এসবের দিকে সরকারের লক্ষ রাখা উচিত। এসব দুর্গম এলাকায় বেশি বেশি চিকিৎসক এবং চিকিৎসাব্যবস্থার আরও উন্নতি করার দরকার।

সমাবেশে রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ মো. রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের সভাপতিত্বে অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল হক হায়দারী, কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদ প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান, কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ মো. সোহরাব উদ্দিন, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ মো. আফজাল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এর আগে রাষ্ট্রপতির কিশোরগঞ্জের চার দিনের সফরে তৃতীয় দিনে বেলা একটার দিকে ডাকবাংলোর হ্যালিপেড মাঠে নামেন। এরপর বেলা দেড়টার দিকে রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান উপলক্ষে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অষ্টগ্রাম রোটারি ডিগ্রি কলেজে বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তিনি শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে পড়াশোনা করে নিজের যোগ্যতায় চাকরি জোগাড় করার আহ্বান জানান।

দুই অনুষ্ঠানেই কিশোরগঞ্জের-৫ আসনের সাংসদ মো. সোহরাব উদ্দিন, রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদের পাশে থাকার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে রাষ্ট্রপতি ও তাঁর সুযোগ্য সন্তানের নেতৃত্ব ছাড়া হাওরে আর কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের উন্নতির সঙ্গে এগিয়ে যেতে চাইলে রেজওয়ান আহাম্মদের নেতৃত্বে হাওরকে আরও সংগঠিত করতে হবে।