ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি) বলেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের পর্যবেক্ষণকৃত এলাকায় ভোট প্রদানের হার প্রায় ৩০ শতাংশ। ভোটকেন্দ্রের বাইরে মোট ৭২টি সহিংসতার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছে তারা। বেশি সহিংসতা ঘটেছে রাজশাহীতে। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে সহিংসতার ঘটনা ঘটে ৪৭টি।
গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ইডব্লিউজি এ তথ্য জানায়। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের প্রাথমিক প্রতিবেদন জানানোর উদ্দেশে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন সুষ্ঠু বা গ্রহণযোগ্য হয়েছে কি না, তারও উত্তর দেননি ইডব্লিউজির প্রতিনিধিরা। তাঁদের মতে, সব তথ্য হাতে পাওয়ার আগে এ ধরনের মন্তব্য করা ঠিক হবে না। ইডব্লিউজি এবারের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ার অনিয়ম বা জালিয়াতির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেনি। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, ভোট দেওয়ার হার এবং ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেখার মধ্যেই পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল। এবার নির্বাচনে ইডব্লিউজির ২৯ সদস্য এনজিওর মধ্যে ২৬টি এনজিও এবং সংখ্যালঘু, আদিবাসী এলাকায় সদস্যবহির্ভূত সাতটি এনজিও পর্যবেক্ষণে অংশ নেয়। সব দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনা করে পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম সীমিত করে ইডব্লিউজি ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ইডব্লিউজির পরিচালক আবদুল আলীম। এতে বলা হয়, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের ভোট দেওয়ার যে হার তার তুলনায় এবারের হার অনেক কম ছিল। পর্যবেক্ষণকৃত এলাকায় ভোট গ্রহণের হার ছিল ৩০ শতাংশ। আলাদাভাবে নারী ভোটারদের ভোট গ্রহণের হার ছিল ৩১ শতাংশ এবং পুরুষ ভোটারদের হার ছিল ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ। ঢাকা ১৭ আসনে ভোট গ্রহণের সর্বনিম্ন হার ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ হার ছিল গোপালগঞ্জ-১ আসনে ৭৪ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে, এবার ৭৫টি আসনে ইডব্লিউজির আট হাজার ৪৪৪ জন সদস্য এক হাজার ৬৮৯টি ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেন। পর্যবেক্ষণকৃত এলাকায় ভোটকেন্দ্রের বাইরে মোট ৭২টি নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেন। বেশি সহিংসতা ঘটেছে রাজশাহীতে। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ৪৭টি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। রংপুরে এ ধরনের বেশি ঘটনা ঘটেছে। পর্যবেক্ষণকৃত এলাকায় ২১টি ঘটনায় ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সময় বাধা দেওয়া হয়েছে। ভোটারদের জোরপূর্বক ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পাঁচটি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধিরা জানান, অনুমোদন থাকার পরও ২২৫ জন পর্যবেক্ষক নিরাপত্তাজনিত কারণে এবং রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের অসহযোগিতায় পর্যবেক্ষণ করতে পারেননি। কিছু এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের সাংসদদের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইডব্লিউজির পর্যবেক্ষকদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে ইডব্লিউজির সদস্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ এবারের নির্বাচনে সীমিত পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে বলেন, ‘দেশের জনগণের মতো আমরাও এবার হতোদ্যম ছিলাম। উৎসাহ-উদ্দীপনা পাইনি। তবে নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে এ এইচ এম নোমান, তালেয়া রেহমান এবং হারুন অর রশীদ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।