নিবন্ধনের পর টিকার অপেক্ষায় দুই কোটি মানুষ
নিবন্ধন করার পর দুই কোটি মানুষ টিকার এসএমএস বা খুদে বার্তা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছেন। দুই মাস পরও অনেকে টিকা পাওয়ার তারিখ জানতে পারছেন না। এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও আলোচনা আছে।
গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কর্মকর্তারা দেশের সিভিল সার্জনদের সঙ্গে অনলাইন সভায় অপেক্ষমাণ মানুষের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। সভায় একাধিক সিভিল সার্জন খুদে বার্তা পাঠানো নিয়ে ভুলত্রুটি ও অনিয়মের কথা তুলে ধরেন। সভায় যুক্ত থাকা তিনটি জেলার সিভিল সার্জনদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।
সভায় আগামী মঙ্গলবার সারা দেশে গণটিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা হয়। টিকাদান জোরদারের পাশাপাশি সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে প্রস্তুতি শুরু করেছে। সরকারের একাধিক মন্ত্রী বলেছেন, ১২ বছরের ওপরে সব শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে কী করে টিকা দেওয়া হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
অবশ্য গতকাল রাজধানী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কম্প্রিহেনসিভ/লাইসেন্সিং পরীক্ষা পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, চীনের কাছ থেকে নতুন করে ৬ কোটি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে সাড়ে ১০ কোটি টিকা কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে এই টিকা দেশে আসার সম্ভাবনা আছে।
নিবন্ধন বনাম টিকা
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মো. সবুর ৩০ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সেন্টারে টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। টিকা নেওয়ার তারিখ এখনো জানতে পারেননি। মিরপুরের বাসিন্দা মাসুদুল হাসান ২২ জুলাই ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে নিবন্ধন করেও এখনো টিকা নিতে পারেননি। তবে মাসুদুল হাসানের অভিযোগ, তাঁর পরে নিবন্ধন করেও পরিচিত একাধিক ব্যক্তি টিকা নিয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সিভিল সার্জনদের গতকালের সভায় এ নিয়ে কথা হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলার সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মুঠোফোনে খুদে বার্তা নিয়ে ভুলত্রুটি হচ্ছে, এ বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম বিভাগের একজন সিভিল সার্জন বলেছেন, অনেকে অনেক দিন আগে নিবন্ধন করেও টিকা পাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ নিবন্ধন করার দু–এক দিনের মধ্যে টিকা পেয়ে যাচ্ছেন। দ্রুত টিকা পেতে অনেকে প্রভাব খাটাচ্ছেন। আবার টিকাকেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও পরিচিতদের সুযোগ দিচ্ছেন, এমন অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে।
সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ বিভাগ জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করা মানুষের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৮৯ লাখ। তাঁদের মধ্যে এক ডোজ টিকা পেয়েছেন ১ কোটি ৮৮ লাখ। অর্থাৎ নিবন্ধন করে এক ডোজও টিকা পাননি ২ কোটি ১ লাখ মানুষ।
গতকালের সভায় অন্যদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাতৃ, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক ডা. মো. শামসুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, টিকার মজুত কমে আসায় চার–পাঁচ দিন এসএমএস দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ধীরগতি ছিল। টিকা আসার পরপরই আবার গতি বাড়ানো হবে।
টিকার মজুত কমছে
দেশে এ পর্যন্ত টিকা এসেছে ৪ কোটি ৩ লাখ ৬০০। এগুলোর মধ্যে আছে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা। গতকাল পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় মিলে মোট ২ কোটি ৭৬ লাখ ৭ হাজার ৩১৬ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।
এখন মজুত আছে ১ কোটি ২৬ লাখ ৯৩ হাজার ২৮৪ ডোজ। এগুলোর মধ্যে ফাইজারের ১০ লাখ টিকা ঢাকার বাইরে ব্যবহার করা যাবে না। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কর্মকর্তারা বলেছেন, হাতে আছে মূলত সিনোফার্মের টিকা। সেই টিকার মধ্যে ৫০ লাখ দেওয়া হবে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী ছয় দিনে। তারপর হাতে টিকা থাকবে ৬৬ লাখের মতো।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সব কেন্দ্রে টিকা পাঠানো হয়েছে। আগের মতোই অল্প সময়ে অনেক মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। তখন ছয় দিনে ৫০ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছিল।
স্কুলশিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার চিন্তা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ১২ বছর বা তার বেশি বয়সী সব শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার কথা সরকার চিন্তা করছে। তিনি এ–ও বলেছেন, এদের মডার্না ও ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে।
দেশে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় চার কোটি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গতকাল পর্যন্ত ১৮ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় দুই লাখ নিবন্ধন করেছেন। তাঁদের মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন ১ লাখ ২১ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষার্থী।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কর্মকর্তারা বলেছেন, বাকি শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় এনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে। ১২ বছর থেকে ১৭ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়ার ব্যাপারে জাতীয় কারিগরি কমিটির অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। কম বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
ওষুধবিজ্ঞানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক কর্মকর্তা–কর্মচারীর টিকা নিশ্চিত হওয়া দরকার। তবে কম বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা অগ্রাধিকার পেলে বয়স্করা টিকা পাওয়ায় পিছিয়ে থাকবেন। বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি।