১০ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলার অন্যতম আসামি জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে ছাড়া শুনানি করা যাবে কি না, তা নিয়ে আইনি বিতর্ক শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রামের আদালতে চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। গত সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন যে ট্রাইব্যুনালের পূর্বানুমতি ছাড়া নিজামীকে অন্য কোনো বিচারিক আদালতে হাজির করা যাবে না। এ অবস্থায় নিজামীর অনুপস্থিতিতে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার শুনানি করা যাবে কি না, অর্থাৎ বিচারকাজ অব্যাহত রাখা যাবে কি না, এ নিয়ে আইনি বিতর্ক শুরু হয়েছে।
এ বিতর্কের সূত্রপাত করেন মামলার আসামি সাবেক দুই গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিমের আইনজীবী কামরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাক্ষ্য আইনে বলা আছে, শুনানির সময়ে এজলাসে আসামির বিরুদ্ধে কী ধরনের বক্তব্য উপস্থাপন হচ্ছে, তা ওই আসামিকে অবশ্যই শোনাতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ধরে নিতে হবে এটা বিচারের নামে প্রহসন। তখন সংশ্লিষ্ট আসামি অবশ্যই আদালতে এর সুবিধা পাবেন।’
তবে চট্টগ্রাম মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) কামালউদ্দিন আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৭ (৬এ) ধারা অনুযায়ী বিশেষ কারণে আসামি অনুপস্থিত থাকা অবস্থায় শুনানি করা যায়। এতে আইনের ব্যত্যয় ঘটবে না। তিনি অভিযোগ করেন, এ নিয়ে বিতর্ক তুলে আসামিপক্ষ মামলা দীর্ঘায়িত করার ফন্দিফিকির করছে।
এই আইনি বিতর্কের মধ্যে আজ বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এ ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান চৌধুরীকে জেরা করবেন আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী। অবশ্য আজ ধার্য তারিখে চট্টগ্রামের আদালতে সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীকে হাজির করা হতে পারে। চট্টগ্রাম কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ছগীর মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলার ১১ আসামির মধ্যে মতিউর রহমান নিজামী, লুৎফুজ্জামান বাবর ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক দুই মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার ও আবদুর রহিম ঢাকার কারাগারে থাকেন। বাকি সাতজন চট্টগ্রামের কারাগারে থাকেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত সোমবার মতিউর রহমান নিজামীর ব্যাপারে যে আদেশ দিয়েছেন তা ৮ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। ফলে ৮ সেপ্টেম্বরের আগে তাঁকে চট্টগ্রামের মামলায় আদালতে হাজির করতে পারব।’
প্রসঙ্গত, বাবর, রেজ্জাকুল হায়দার ও আবদুর রহিম ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি। আর নিজামীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। এ কারণে তাঁদের ঢাকার কারাগারে রাখা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এ ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকসংক্রান্ত দুটি মামলার (অস্ত্র ও চোরাচালান মামলা) বিচার চলছে। আদালত সূত্র জানায়, মামলা দুটির রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য উপস্থাপন প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখন তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যের ওপর আসামিদের জেরা চলছে। তদন্ত কর্মকর্তাকে ইতিপূর্বে মতিউর রহমান নিজামীর আইনজীবী জেরা শেষ করেছেন।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের ইউরিয়া সার কারখানার (সিইউএফএল) জেটিঘাটে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালানটি ধরা পড়ে। এ ঘটনায় কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র ও চোরাচালান আইনে দুটি মামলা হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সিআইডি মামলা দুটির অধিকতর তদন্ত করে। এরপর মতিউর রহমান নিজামী, লুৎফুজ্জামান বাবর, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়া ও গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তাসহ ১১ জনকে আসামি করে ২০১১ সালের ২৬ জুন আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি।