নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে অব্যাহতি পেল নির্বাচন কমিশন

অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, চার নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনের একজন কর্মকর্তা। গতকাল রোববার এ–সংক্রান্ত আদালত অবমাননার অভিযোগে দেওয়া রুল নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ছয়জনকে অব্যাহতি দিয়ে ওই আদেশ দেন। আদালতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ড. মুহাম্মদ ইয়াসীন খান।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড ভোটকেন্দ্রের ভোট ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও কারচুপির কারণে গত ৭ এপ্রিল ভোট বাতিল বা পুনর্নির্বাচনের আবেদন করেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. জাহিদুল ইসলাম। গত ২৩ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন জানায়, নিয়ম অনুসারে গেজেটে ফল প্রকাশের পর আবেদনকারী ট্রাইব্যুনালে যেতে পারেন।

গত ২২ মে জাহিদুল ইসলাম প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর আরেকটি আবেদন করেন। কিন্তু এই আবেদনও নিষ্পত্তি হয়নি। পরে এই আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ওই প্রার্থী। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গত ১৬ জুন রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ওই আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।

জাহিদুল ইসলাম নির্ধারিত সময়ে ওই আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় তা তদন্তের জন্য নির্দেশনা চেয়ে আরেকটি আবেদন দেনএই আবেদনের শুনানিকালে গত ৭ আগস্ট হাইকোর্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ছয়জনের প্রতি আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন কার্যক্রম শুরু করা হবে না, এ মর্মে কারণ দর্শাতে বলেন। পাশাপাশি ওই অভিযোগ তদন্ত ও পরবর্তী তারিখে তা আদালতকে অবহিত করতে বলেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ওই অভিযোগ তদন্তের জন্য নির্বাচন কমিশন ১৮ অক্টোবর এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়। ২৭ অক্টোবর ওই কর্মকর্তার দেওয়া প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, জাহিদুল ইসলামের গত ৭ এপ্রিল ও ২২ মে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া অভিযোগ ও বিভিন্ন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও এ–সংক্রান্ত কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ভোটকেন্দ্র অর্থাৎ উত্তর বগুলাসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

আইনজীবী সূত্র জানায়, আদালত অবমাননার রুলের পরিপ্রেক্ষিতে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কমিশনার আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ, জাবেদ আলী ও মো. শাহনেওয়াজ ও একজন কর্মকর্তা নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনার আবেদন সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেন। এতে কমিশন বলেছে, আদালতের আদেশটি তাঁরা বুঝতে পারেননি। ভুলকে অনিচ্ছাকৃত উল্লেখ করে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করে কমিশন। গতকাল আদালতে নির্বাচন কমিশনের সম্পূরক আবেদন দাখিল করা হয়।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইনজীবী ড. মুহাম্মদ ইয়াসীন খান পরে প্রথম আলোকে বলেন, ওই প্রার্থীর আবেদন দুটি ইসি নিষ্পত্তি করেছে। এ বিষয়ে ইসির সম্পূরক হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা, নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে অভিযোগ তদন্ত করেছে। ১৪ নভেম্বর প্রথমে ও ২৬ নভেম্বর সম্পূরক হলফনামা দাখিল করা হয়। তদন্তের যে আদেশ আদালত দিয়েছিলেন, তা প্রতিপালন করা হয়েছে বলে প্রথম হলফনামায় বলা হয়। এতে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করা হয়। আদালত তাঁদের অব্যাহতি দিয়েছেন। এখন মূল রুল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে।