নবাবগঞ্জে সড়কজুড়ে জলাবদ্ধতা, কাদা-গর্তে একাকার
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের ভাঙ্গাপাড়া হয়ে জৈনতপুর, দীর্ঘগ্রাম দিয়ে জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ঘোষাইল, রাজাপুর, বালেঙ্গা যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটির ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের একাংশে কাদা-গর্তে জলাদ্ধতায় একাকার। এলাকাবাসী চলাচলের একমাত্র রাস্তা এটি। বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের। মাঝেমধ্যে নিজ উদ্যোগে এলাকাবাসী রাস্তাটি সংস্কার করলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার পুরোনো চেহারা ফিরে পায় রাস্তাটি। ফলে দুর্ভোগের সীমা নেই এই অঞ্চলের মানুষের।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার পশ্চিমে এলাকাটি অবস্থিত হওয়ায় অনেকটাই অবহেলিত বলেও জানান এলাকাবাসী। সামান্য বৃষ্টিতেই কাদামাটি মাড়িয়ে চলতে হয় তাদের। এলাকাবাসী রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানান।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধিরা শত আশ্বাস দিলেও নির্বাচনের পরে আর কোনো খবর নেন না তাঁরা। আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতিতেই থাকে কাজ। কাজের কাজ কিছুই হয় না। সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় সারা বছরই।
ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, ভ্যান, রিকশা ও মালবাহী বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে রাস্তাটি দিয়ে। এ ছাড়া রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন ছয়টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ হাটবাজার, স্কুল-কলেজ, ব্যাংক, হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যাতায়াত করে। জৈনতপুর থেকে ঘোষাইল পর্যন্ত রাস্তাটি দিয়ে কোনোভাবে চলাচল করতে পারলেও ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের একাংশ বেহাল। ভাঙ্গাপাড়া বাইতুন নূর জামে মসজিদের সামনে সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি। নেই পানিনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা। ইজিবাইক, মোটরসাইকেল চলাচল করলেই কাদাপানি ছিটে আসে শরীরে। নষ্ট হয় জামাকাপড়। বৃষ্টি হলে হেঁটে রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করাও দায়।
এ ছাড়া রাস্তাটি দিয়ে আশপাশের দুটি প্রাথমিক, একটি মাধ্যমিক ও দুটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। এই রাস্তাটি দিয়েই জৈনতপুর আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও যাতায়াত করে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে কোনো রকমে চলাচল করতে পারলেও বৃষ্টির দিনে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। নারী, বৃদ্ধ, শিশু ও প্রসূতি কোনো রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রেও মারাত্মক ঝুঁকি নিতে হচ্ছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের।
উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে রাস্তাটির কিছু অংশ কার্পেটিংয়ের কাজ শুরুর জন্য বালু ফেলে রাস্তাটি সংস্কার করা হয়। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ সাড়ে ৪০০ মিটারই সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।
ইজিবাইকচালক মিন্টু খান বলেন, মাহিন্দ্রা চলাচল বন্ধ না করার কারণে রাস্তার অবস্থা খারাপ। প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। আমার চোখের সামনেই সেদিন একটি ইজিবাইক উল্টে পড়ল। এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ। দ্রুত রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
স্কুলছাত্র সাজিদ হোসেন জানায়, রাস্তাটি দিয়ে বৃষ্টির দিনে স্কুলে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কাদা ছিটকে স্কুলের ড্রেস নষ্ট হয়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, রাস্তাটি প্রায় ১০–১১ বছর আগে ইটের সম্প্রসারণ করা হয়। এরপর দুই কিলোমিটার কার্পেটিং করার অনুমোদন পেলেও মাঝপথেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে এলাকাবাসীর প্রয়োজনে কিছু মাটি দিয়ে সংস্কার করা হলেও সামান্য বৃষ্টিতেই ধসে পড়ে।
বারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আরিফুর রহমান শিকদারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাস্তাটির কাজ নেয়। কী কারণে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় কাজ। এ ব্যাপারে আমি কয়েকবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠান কাজের ব্যাপারে তেমন কোনো কিছুই আর বলে না। এরপরও আমি চেষ্টা করছি রাস্তাটি যেভাবে হোক মেরামতের ব্যবস্থা করার। ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের রাস্তাটি প্রতিবছরই সংস্কার করা হয়। এখন বর্ষা মৌসুম সংস্কার করা হলে বৃষ্টিতে ধসে যেতে পারে, এ কারণে বর্ষার পরেই আবার সংস্কার করা হবে।’