নতুন দরিদ্রদের কথা অর্থমন্ত্রী একসময় স্বীকার করবেন: হোসেন জিল্লুর
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, অর্থমন্ত্রী একসময় নতুন দরিদ্রদের কথা স্বীকার করতে বাধ্য হবেন। শুধু দেশীয় নয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাস্তবতার দিকে নতুন করে নজর দিলে এটি তিনি অনুধাবন করবেন।
আজ মঙ্গলবার এক গবেষণার প্রকাশনা উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল সভায় কথাগুলো বলেন অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে) এই সভার আয়োজন করে। সভায় ‘কোভিড-১৯ এ জীবিকার সংকট, সামাজিক সংহতির প্রতিবন্ধকতা ও প্রশমনের উপায়’ শীর্ষক এই গবেষণার নানা উপাত্ত তুলে ধরা হয়।
কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিতে এর বড় প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপের ফলাফল বলছে, কোভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে, ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত যা ছিল ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ। ওই জরিপে যারা সাধারণত দারিদ্র্যসীমার ওপরেই বসবাস করে কিন্তু যেকোনো অভিঘাতে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে, তাদের নতুন দরিদ্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
এ ছাড়া গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার প্রভাবে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার (আপার পোভার্টি রেট) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশ। দেশব্যাপী খানা জরিপের ভিত্তিতে এই তথ্য জানায় সংস্থাটি। বিবিএসের খানা জরিপ অনুসারে, ২০১৬ সালে দেশের গ্রামাঞ্চলের সার্বিক দারিদ্র্য ছিল ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১৮ সালের জিইডি-সানেমের জরিপ অনুসারে যা ছিল ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু সানেমের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
তবে বাজেট ঘোষণার পর গত ৯ জুন সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন দরিদ্রের এই হিসাব আমি স্বীকার করি না। যাদের কাছে তালিকা আছে ২ কোটি বা ১ কোটি বা ১০ জন, এই তথ্য তাঁরা কোথায় পেয়েছে, আগে তা জানা দরকার।’
সিপিজের সভার মুখ্য আলোচক ছিলেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান। আজকের সভায় নতুন দরিদ্রের কথাটি একাধিক আলোচকের মুখে উঠে আসে। হোসেন জিল্লুর বলেন, নতুন দরিদ্রের সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি বাস্তবতা। এ কথা একসময় অর্থমন্ত্রী স্বীকার করতে বাধ্য হবেন।
হোসেন জিল্লুর বলেন, কোভিডকালে নগরের দরিদ্র শ্রেণি সবচেয়ে বেশি সংকটে আছে। কিন্তু এ বিষয়টি খুব নজরে আসছে না। আমাদের দেশের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি অনেক বেশি গ্রামকেন্দ্রিক। তবে কোভিড চলাকালে ওএমএসসহ কিছু সুরক্ষা কর্মসূচি শহরাঞ্চলে সরকার চালু করেছে।
ব্র্যাকের চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, কোভিডে নানা সংকটের মধ্যে একটি বড় সংকট উন্নত তথ্যের অভাব। সাম্প্রতিককালে লকডাউন নিয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি হলো তাতে তথ্যের এই ঘাটতির বিষয়টি আবারও প্রমাণিত হলো।
এই উন্নত তথ্যের প্রবাহের কথা বলেন আজকের সভার আরেক আলোচক জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি। তিনি বলেন, উন্নতমানের তথ্য তৈরি ও এর অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা এই মহামারির সময় খুব তাৎপর্যপূর্ণ। এটি ঝুঁকির পরিমাণ কমায়।
আজকের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিজের নির্বাহী পরিচালক মনজুর হোসেন। গবেষণাটি পরিচালনা করেন সানাউল মোস্তফা ও শহীদুল ইসলাম।