ধর্ষণের ঘটনায় বিয়ের শর্তে জামিন হয় কীভাবে—এমন প্রশ্ন রেখেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, এ ধরনের বিয়ে তো টিকবে না। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার ওই মন্তব্য করেন।
ধর্ষণের মতো শাস্তিযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা বা সালিস বা মীমাংসা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এবং এর আগে এ বিষয়ে দেওয়া তিনটি রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন চেয়ে গত বছরের ১৯ অক্টোবর আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পক্ষে হাইকোর্টে রিট করা হয়। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন।
গত ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট ধর্ষণের ঘটনায় মধ্যস্থতা বা সালিস বা মীমাংসা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ধর্ষণের ঘটনায় গত পাঁচ বছরে সারা দেশের থানা, আদালত ও ট্রাইব্যুনালে কতগুলো মামলা হয়েছে, তা জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ অনুসারে পুলিশ প্রধান (আইজিপি) ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। এর ওপর আজ শুনানি হয়। শুনানি নিয়ে আদালত ২৩ মে পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রেখেছেন।
এর আগে শুনানিকালে আদালত বলেন, রুল ও আদেশের পর ধর্ষণের ঘটনায় কোনো মধ্যস্থতার ঘটনা ঘটেছে কি? তখন রিটের পক্ষে আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, ‘গণমাধ্যমে এসেছে ১৬ জানুয়ারি খুলনায় একটি ঘটনা ঘটেছে, যে ধর্ষণের বিচার করা হলো বিয়ের মাধ্যমে। রংপুরের পীরগাছায় ৪ নভেম্বর ধর্ষণের ঘটনায় গ্রাম্য সালিস, ১ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করার ঘটনা ঘটে।’
তখন আদালত বলেন, ‘তাহলে বলছেন মধ্যস্থতা বন্ধ হয়নি, বিয়ে দিয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আমরা এটি সত্যায়ন করছি হাইকোর্ট থেকে। হাইকোর্ট থেকে অনুমোদন করার প্রেক্ষিতে এখন জজকোর্টগুলো তা করছে। শর্ত দেওয়া হচ্ছে বিয়ে করো, তাহলে জামিন দেওয়া হবে। অবাক লাগে, এটি কীভাবে হয়? যাকে ধর্ষণ করা হলো, তার জীবনটা ধ্বংস করা দিল একরকম। বিয়ে দেওয়া হচ্ছে সময়ের প্রয়োজনে অপরাধীকে বাঁচাতে। এ ধরনের বিয়ে তো টিকবে না। এই বিয়ে করার ১৫ দিন পর সে (অপরাধী) তো চলে যাবে।’