ধর্ষণ-হত্যার বিচারপ্রক্রিয়া সহজ করা হোক
বাংলাদেশে একের পর এক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটে চলেছে। যেগুলো প্রকাশ পায়, সেসব ঘটনায় তোলপাড় হয়ে ওঠে। ধর্ষণ বা হত্যাকারীর বিচার এবং ফাঁসির দাবিতে আপামর মানুষ সোচ্চার হয়। তারপর সময় যত গড়ায়, ধীরে ধীরে সব উত্তেজনাও নিস্তেজ হয়ে যায়। তত দিনে ঘটে যায় আরও একটি নতুন ঘটনা। নতুন ঘটনা নিয়ে আবার শুরু হয় আলোড়ন, পুরোনোটা অতীতের গহরে নিপতিত হয়।
কিছুদিন আগেও বাংলাদেশে তোলপাড় চলছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ধর্ষণ নিয়ে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গিয়ে জীবন দিতে হয়েছে ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে। নুসরাত জাহানের ধর্ষণের কবলে পড়া আর দশজনের অসহায় বা আকস্মিক পরিস্থিতির মতো নয়। এমন পরিস্থিতি তাঁর জন্য তৈরি হচ্ছে, তা বুঝতে পেরেই এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান নুসরাত। তিনি ঘোষণা দিয়েই এ লড়াইয়ে নেমেছিলেন। বান্ধবীকে লেখা চিঠিতে নুসরাত স্পষ্টই বলেছিলেন, ‘আমি লড়ব শেষনিশ্বাস পর্যন্ত। আমি মরব না, আমি বাঁচব। আমি তাঁকে শাস্তি দেব। সে আমায় কষ্ট দিয়েছে। আমি তাকে এমন শাস্তি দেব, যা দেখে অন্যরা শিক্ষা নেবে। আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেব।’ স্পষ্টতই বলা যায়, ধর্ষণের বিরুদ্ধে নুসরাত লড়াকু এক সাহসী সৈনিক। মাদ্রাসাপড়ুয়া একজন ছাত্রী নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই দৃষ্টান্তমূলক।
নুসরাত যা স্থাপন করে গেলেন, তা তুলনাহীন, মুখ বুজে মার খাওয়া নয়। বিচার কি হয়েছে? নুসরাত লড়াই করে আত্মাহুতি দিয়েছেন। অধিকার আন্দোলনে নিশ্চয় স্মরণীয় হয়ে রইবেন নুসরাত। শেষ পর্যন্ত নুসরাত জিতেছেন। হত্যা মামলায় ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদলত। কিন্তু বাকিদের কী হয়েছে? কিন্তু হবে কি ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের বিচার? কী হয়েছে অন্যান্য ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায়? সময় যত গড়িয়ে যায়, এসব মর্মান্তিক ঘটনা কোথায় যেন হারিয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রশমিত হয়ে যায় বাসের ধর্ষণের উত্তেজনা। অন্যান্য আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনার মতো এ ক্ষেত্রেও প্রশ্ন উঠেছে, ঢাবি শিক্ষার্থী কি শেষ অবধি বিচার পাবেন?
প্রশ্ন ওঠা অবশ্যই অমূলক কিছু নয়। ধর্ষণ ও হত্যার শিকার তনুর ঘটনায় কি হয়েছে বিচার? টাঙ্গাইলে বাসের চালক, চালকের সহকারী মিলে ধর্ষণের পর হত্যা করেছিলেন যে রূপাকে, তার বিচারের কী হলো? সিলেটে বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রীকে কোপানোর ঘটনার কী হলো?
ঘটনা আর ঘটনা। এই মুহূর্তে সব ঘটনা মনে পড়ছে না। প্রশ্ন একটাই, কী হলো এসব ঘটনার বিচার? কী হলো সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের?
যেকোনো কারণে হোক, সময়ক্ষেপণই ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের ধর্ষক-হত্যাকারীদের। তারা মনে হয় অপেক্ষায় থাকে সময় পার পাওয়ার। সময় যত গড়িয়ে যায়, মামলা ততই স্তিমিত হয়ে আসে। নানা প্যাঁচে ছলচাতুরীতে আসামিরা তাদের অবস্থানকে শক্ত করে তুলতে পারে। বিচারপ্রক্রিয়ায় প্রথম পর্যায়েই ঝামেলা তৈরি করে পুলিশ। মামলা গ্রহণে অনীহা, অভিযোগ বিকৃত করে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার অভিযোগও শোনা যায়। মামলা দুর্বল করার অভিযোগ বাংলাদেশে পুলিশের বিরুদ্ধে আছে।
এমনই ঘটনা ঘটেছে নুসরাতের মামলার ক্ষেত্রে। থানার ওসি মামলাটাকে বিকৃত করে উল্টো নুসরাতকেই আসামির চেষ্টা করা হয়েছে।
এরপর ঝামেলা পেরিয়ে শুরু হয় আদালতের প্রক্রিয়া। সেখানে সাজার রায় হয়েছে। তবে সব প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্নের পরই দণ্ড জোটে আসামির কপালে। সহজ করা হোক ধর্ষণ-হত্যার বিচারপদ্ধতি।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া