‘দেশে স্ট্রোক রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা অপ্রতুল’
মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ হলেও দেশে স্ট্রোক রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা অপ্রতুল। ঢাকায় মাত্র দুটি সরকারি ও পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতালে স্ট্রোক ব্যবস্থাপনার সুবিধা রয়েছে। স্ট্রোকে মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব কমাতে সারা দেশে এই সুবিধা চালু করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া দেশে ডায়াবেটিক রোগীদের ব্যবস্থাপনার ওপরও জোর দিয়েছেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগ দেশের উন্নয়নের পথে অন্তরায়।
আজ শুক্রবার প্রথম জাতীয় অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্মেলনের সমাপনী দিনে এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। ২৬ জানুয়ারি এই সম্মেলন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামসহ ৩০টি দেশি–বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন সেশনে অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য মো. শারফুদ্দীন আহমেদ প্রমুখ।
সমাপনী দিনে গবেষণা তথ্য তুলে ধরে বিএসএমএমইউয়ের নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুভাষ কান্তি বলেন, বাংলাদেশে মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ স্ট্রোক। বেশির ভাগ স্ট্রোক (প্রায় ৮৫%) ইস্কেমিক এবং এটি একটি জরুরি চিকিৎসার আওতাভুক্ত রোগ। আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে ইস্কেমিক স্ট্রোক ব্যবস্থাপনার দ্রুত উন্নতি হচ্ছে কিন্তু ঢাকায় এ চিকিৎসা অপ্রতুল। তাই স্ট্রোকের কারণে মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব কমাতে সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এর সেবা ব্যবস্থা চালু করা উচিত।
সমাপনী দিনে আরও কিছু গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। সার্ভিক্যাল ক্যানসারবিষয়ক এক গবেষণায় বলা হয়, দারিদ্রতার কারণে চিকিৎসা শেষ করতে পারে না সার্ভিক্যাল ক্যানসারে আক্রান্ত দেশের অনেক নারী। সারা দেশে সার্ভিক্যাল আক্রান্ত ৮৫ নারী স্ক্রিনিংয়ের বাইরে থাকেন। এ ক্যানসারে আক্রান্ত ১১ দশমিক ২ শতাংশ নারী রেডিয়েশন সেবা পান। এত অপ্রতুলতা সত্ত্বেও ২০৩০ সালের মধ্যে সার্ভিক্যাল ক্যানসার নির্মূলের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।
বিএসএমএমইউয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারিয়া হাসিন বলেন, বিএসএমএমইউর প্যালিয়াটিভ কেয়ার টিমের ১০৪ জন রোগী ও ২৪ জন সদস্যের ওপর চালানো একটি গবেষণা চলানো হয়। এর বেশির ভাগই বিবাহিত মহিলা। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন ক্যানসার রোগী এবং তাঁদের প্রধান লক্ষণ ছিল ব্যথা।
ফারিয়া হাসিন বলেন, রোগীরা ‘হোম-বেসড প্যালিয়াটিভ কেয়ার’ খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন। তাঁরা এই সেবায় অনেক বেশি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এই সেবাকে ত্বরান্বিত ও প্রসার ঘটাতে আরও বেশি লিঙ্গভিত্তিক সেবা দিতে হবে, জনবল ও উপকরণ বাড়াতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং সেবাদানকারীদের মনো-সামাজিক ও আত্মিক সেবাদানের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীর ব্যবস্থাপনা নিয়ে এক গবেষণা তুলে ধরেন বিএসএমএমইউর এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহজাদা সেলিম। তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশের জন্য টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগের ব্যবস্থাপনা একটি বড় বাধা। এর কারণ হিসেবে দেখা যায়, অনেক উন্নয়নশীল দেশেই অল্প কিছু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি রয়েছেন, যাঁরা ডায়াবেটিস ও এন্ড্রোক্রাইনোলজি বিষয়ে অভিজ্ঞ। এ ছাড়া এই রোগে মুখে খাওয়ার ওষুধের স্বল্পতা রয়েছে। ঘাটতি রয়েছে ইনসুলিন, ইনজেককশন ডিভাইসে।
শাহজাদা সেলিম বলেন, রোগীর যদি ইনসুলিন বা ইনজেকশন কেনার সামর্থ্য না থাকে তবে টাইপ-১ ডায়াবেটিস মৃত্যুরও কারণ হতে পারে।
১২ চিকিৎসককে সম্মাননা
চিকিৎসাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ছয় চিকিৎসককে মরণোত্তর সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া ছয় চিকিৎসককে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি সম্মেলনের সমাপনী পর্বে এ বিশেষ সম্মাননা ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম এ মালেক, ডেল্টা হসপিটাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মোকাররম আলী, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স অ্যান্ড হসপিটালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, অধ্যাপক সাদিকা তাহরিন খানম, কিডনি ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. হারুণ অর রশিদ, শমরিতা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এন আলমকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
বারডেমের প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহীম, দ্য ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন রিসার্চ (আইপিজিএমআর) এবং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, দেশের প্রথম মুসলিম নারী চিকিৎসক অধ্যাপক জোহরা বেগম কাজী, মেডিসিনের অধ্যাপক এস জি এম চৌধুরী, অধ্যাপক নিজামুদৌলা চৌধুরী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. মনোয়ারা বিনতে রহমানকে মরণোত্তর সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।