প্রায় ছয় মাস ধরে জাহাজে আটকে আছেন তাঁরা। ভিসা না থাকায় জাহাজ থেকে নামার অনুমতি পাননি। অসুস্থ বাবাকে দেখতে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছিলেন নানা জায়গায়। তাতে কোনো লাভ হয়নি। বাবা মারা গেছেন দিন কয়েক আগে। এখন মা অসুস্থ। তবু দেশে ফেরার কোনো উপায় পাচ্ছেন না। দীর্ঘ সময় সমুদ্রে থাকার বিষণ্নতা, আর বাবাকে হারানোর বিষাদে ডুবে আছেন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান।
মিজানুর একটি জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী। দুটি জাহাজে তিনিসহ ছয়জন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার আটকা পড়েছেন ভিয়েতনামের থাই বিন প্রদেশের থাই বিন বন্দরে। বন্দর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে তাঁদের জাহাজ। চুক্তি অনুসারে ৪ মাস জাহাজে থাকার কথা থাকলেও প্রায় ১০ মাস হয়ে গেছে তাঁদের। দেশে ফেরার কোনো উপায় পাচ্ছেন না। দূতাবাস বলছে, ভিসার ব্যবস্থা করবে জাহাজমালিক। আর জাহাজমালিক বলছে, দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করতে।
এই মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের মতো অনেক প্রবাসী কর্মী ভিয়েতনামে গিয়ে আটকা পড়েছেন। রাজধানী হ্যানয় থেকে খুদে বার্তা পাঠিয়েছেন প্রবাসী কর্মী ছোটন সূত্রধর। বলেছেন, ‘আমাদের কালকে দুপুরে খাওয়া দিছে। আর এখন পর্যন্ত খাওয়া দেয়নি। আমরা বাঁচব কীভাবে! প্লিজ ভাই, আমাদের দিকে একটু তাকান।’ এর আগেও একাধিকবার ফোন ও বার্তা দিয়ে সাহায্য চেয়েছেন তিনি।
করোনা পরিস্থিতিতে ভিয়েতনামে আটকে পড়া সব বাংলাদেশির একটাই আকুতি, দেশে ফিরতে চান তাঁরা। এর আগেও কয়েক দফায় দূতাবাসের সামনে অবস্থান নেন প্রবাসী কর্মীরা। কয়েক দিন রাস্তায় থাকার পর ৭০ জনকে কয়েকটি হোটেলে রাখা হয়। এরপর প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের খরচে কর্মীদের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ দূতাবাস। কর্মীদের কাছ থেকে আবেদন নেওয়া হয়। এরপর ১৮ আগস্ট ১০৬ জন প্রবাসী কর্মীকে বিশেষ উড়োজাহাজে করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। অনেক চেষ্টা করেও এ তালিকায় নাম ওঠাতে পারেননি মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা।
ভিয়েতনামপ্রবাসী কর্মীরা বলছেন, সব নিয়ম মেনে বৈধভাবে বিদেশে গেছেন। চুক্তি অনুসারে কাজ পাননি। ভাগ্য ফেরাতে বিদেশে গিয়ে উল্টো প্রতারিত হয়েছেন। অনিয়মিত ও কষ্টকর কাজ, থাকার কষ্ট, নির্যাতন, দালালের নিপীড়নের মুখে পড়ে তাঁরা বাংলাদেশ দূতাবাসে চলে আসেন।
দূতাবাস সূত্র জানায়, করোনা প্রতিরোধে আরও কঠোর অবস্থানে ভিয়েতনাম সরকার। দেশটির সব সীমান্ত বন্ধ। কোনো অভিবাসী কর্মীকে এক শহর থেকে আরেক শহরে যেতে দিচ্ছে না। এ মুহূর্তে কোনো কর্মীর পক্ষে দেশে ফেরা সম্ভব নয়।
জানতে চাইলে ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ প্রথম আলোকে বলেন, কর্মীদের কাজে ফিরিয়ে নেওয়া, ন্যায্য বেতন ও সুবিধা আদায় নিশ্চিত করবে ভিয়েতনাম সরকার। নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব নিতে বাধ্য করবে তাঁরা।
তবে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের ফেরানোর চেষ্টা করেও ভিয়েতনাম সরকারকে রাজি করাতে পারেননি বলে জানান সামিনা নাজ। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সমুদ্রে অবস্থান করায় তাঁরা দূতাবাসের আওতায় নেই। তবু অনেক চেষ্টা করা হয়েছে।
জানতে চাইলে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রণালয়, রিক্রুটিং এজেন্সি ও দূতাবাসের দায় আছে প্রবাসী কর্মীদের প্রতারিত হওয়ার ক্ষেত্রে। বৈধভাবে বিদেশে গিয়ে কর্মীরা বিপদে পড়েছেন। দূতাবাসের দায়িত্ব, তাঁদের সমস্যার সমাধান করা।