নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে সংগঠন উইমেন অ্যান্ড ই–কমার্স—উইয়ের ফেসবুক গ্রুপে মার্চ মাসে ছিল ৫০ হাজার সদস্য। সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ লাখে। করোনাকালে নারী উদ্যোক্তারা এই গ্রুপের মাধ্যমে পেয়েছেন ব্যাপক সফলতা। কথা বলেছেন উইয়ের প্রতিষ্ঠাতা নাসিমা আক্তার এবং উই গ্রুপের অ্যাডমিন ও অন্যতম উপদেষ্টা রাজীব আহমেদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর যুগ্ম ফিচার সম্পাদক পল্লব মোহাইমেন।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: উইমেন অ্যান্ড ই–কমার্স বা উইয়ের শুরুটা কীভাবে হলো?
নাসিমা আক্তার: ২০১০–১১ সালে আমি একটি সফটওয়্যার কোম্পানি শুরু করি। ২০১৬ সালে ই–কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই–ক্যাব) একজন পরিচালক নির্বাচিত হই। তখন বুঝতে পারি, ওয়েবসাইট বা ফেসবুকভিত্তিক নারী উদ্যোক্তাদের কিছু সমস্যা আছে, যেগুলোর সমাধান প্রয়োজন।
রাজীব আহমেদ: আমি তখন ই–ক্যাবের সভাপতি। নিশাকে (নাসিমা আক্তারের ডাকনাম) বললাম, শুধু নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা একটা প্ল্যাটফর্ম করা দরকার। তাঁকে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করলাম।
নাসিমা আক্তার: ২০১৭ সালে ফেসবুক পেজ দিয়ে শুরু হলো উই। আমাদের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ একই বছরের ২৫ অক্টোবর। পরের বছর ট্রাস্ট আইনের অধীনে উইয়ের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়। এরপর রাজীব আহমেদকে অনুরোধ করি উই গ্রুপের হাল ধরতে। ২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট ফেসবুকে উইয়ের গ্রুপ খোলা হলো। ওয়েবসাইট চালু হয়েছিল ওই বছরের ২৪ জুন।
প্রশ্ন :
উইয়ের ফেসবুক গ্রুপ তো এখন খুবই সক্রিয়। মার্চে আপনাদের সদস্য ছিল ৫০ হাজার, মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে এ সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব হলো?
নাসিমা আক্তার: প্রথমে সদস্যসংখ্যা বাড়ার গতি ধীরই ছিল। মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর অনেক নারী উদ্যোক্তা ব্যবসা করতে পারছিলেন না। কারণ, সবকিছু বন্ধ ছিল। আবার অনেকের চাকরি হারাতে হয়েছে, বাড়িতে বসে কিছু একটা করার কথা ভেবেছিলেন। যখন সরকার হোম ডেলিভারির অনুমতি দিল, তখন উদ্যোক্তারা আশার আলো দেখলেন। উই গ্রুপে সদস্যসংখ্যাও বাড়তে থাকল দ্রুত। রাজীব আহমেদ গ্রুপ অ্যাডমিন হিসেবে খুব দক্ষতার সঙ্গে এটি পরিচালনা করেন, সেটিও একটা কারণ। ২০ মার্চ গ্রুপের সদস্যসংখ্যা ছিল ৫০ হাজার। এ সংখ্যা ১ লাখ হয়ে যায় ১৬ মে। ৫ লাখ সদস্য হয় ১৮ জুলাই। উই ১০ লাখের মাইলফলক অতিক্রম করে ২৫ সেপ্টেম্বর।
প্রশ্ন :
উই তো ই–কমার্স সাইট নয়।
নাসিমা আক্তার: একেবারেই না। নারী উদ্যোক্তারা এই গ্রুপে নিজেদের তৈরি পণ্য বা সেবার কথা তুলে ধরেন, ছবি দেন। একে অন্যের সঙ্গে কথা বলেন, যোগাযোগ করেন, পণ্য কেনেন।
প্রশ্ন :
উইয়ের ফেসবুক গ্রুপ এত গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠার কারণ কী?
রাজীব আহমেদ: ২০১৪ সাল থেকে ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ চালানোর অভিজ্ঞতা থাকার কারণে আমি কিছু নিয়মকানুন গ্রুপে মেনে চলি। যেমন এখানে কোনো বিক্রির পোস্ট কেউ দিতে পারবেন না। কোনো লিংক পোস্ট করা যাবে না। লাইভ করা যাবে না। কোনো গ্রুপ কাজের এবং ফোকাসড হলে সেটি বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়। যাঁরা উদ্যোক্তা, তাঁদের নিজেদের তুলে ধরতে হবে সবার আগে। এই কাজটাই করে উই।
প্রশ্ন :
উইয়ের কার্যক্রম আর কী কী?
নাসিমা আক্তার: উই থেকে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নানা ধরনের কর্মশালার আয়োজন করা হয়। নিয়মিত অডিও আড্ডা চলে। সপ্তাহে এক দিন এতে অংশ নেওয়া যায়। দেশি–বিদেশি প্রশিক্ষক দিয়ে প্রতি মাসে একবার ‘এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ মাস্টার ক্লাস’ পরিচালনাও করা হয়। এটা বাংলা ও ইংরেজিতে হয়ে থাকে।
প্রশ্ন :
অডিও আড্ডায় আসলে কী ধরনের আলোচনা হয়?
রাজীব আহমেদ: উদ্যোক্তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। নতুন নতুন উদ্যোগের কথাও জানা যায়। যেমন এই আড্ডা থেকেই আমি জানতে পারি, বাংলাদেশে কফির চাষ হয়।
প্রশ্ন :
উইয়ের সঙ্গে কি পুরুষ উদ্যোক্তারাও আছেন? এত বড় একটা গ্রুপ আপনারা চালান কীভাবে?
রাজীব আহমেদ: পুরুষ উদ্যোক্তাও আছেন। তবে ৯০ শতাংশই নারী। উইতে এখন পর্যন্ত ১৭ লাখের বেশি পোস্ট করা হয়েছে। এখন গ্রুপ পরিচালনার জন্য ৪০ জনের একটা দল রয়েছে। উইয়ের নিজস্ব অফিস আছে। ই–কমার্স প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য উইয়ের নিজস্ব সিলেবাস রয়েছে। যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হন উদ্যোক্তারা, সেগুলো সমাধানেরও চেষ্টা করা হয়।
প্রশ্ন :
করোনাকালেই উই বড় একটি গ্রুপে পরিণত হয়। এ সময়ে উইয়ের মাধ্যমে কী পরিমাণ বেচাকেনা করেছেন উদ্যোক্তারা?
নাসিমা আক্তার: ১ লাখ টাকার বেশি বিক্রি করেছেন ৩৫০ জন। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের বিক্রি ১০ লাখ টাকার বেশি।
রাজীব আহমেদ: করোনার এই সময়ে প্রায় তিন কোটি টাকার মতো বেচাকেনা হয়েছে উইয়ের মাধ্যমে। এখন প্রতিদিন ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা বিক্রি হয়।
প্রশ্ন :
কোন বিষয়কে আপনারা বেশি গুরুত্ব দেন?
রাজীব আহমেদ: দেশি পণ্য। মাঝেমধ্যেই দেশি পণ্য নিয়ে আয়োজন করি, ফেসবুক গ্রুপেই। জামদানি ওয়েভ বা মণিপুরি তাঁতের শাড়ি—এ রকম বিষয় নিয়ে আয়োজন থাকে। উইতে কোনো বিদেশি পণ্যের পোস্ট দেওয়া যায় না। আমরা মনে করি, উই গ্রুপের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা পণ্যের আমদানি কমাতে বড় ভূমিকা রাখছেন।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: আগামী দিনে উই নিয়ে পরিকল্পনা কী?
নাসিমা আক্তার: উদ্যোক্তাদের কাজের গুণগত মান উন্নয়নের চেষ্টা করে যাবে উই। নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্য যাতে সহজে রপ্তানি করা যায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে উই।