দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ব্রেইল বই দেবে এনসিটিবি

আসন্ন নতুন বছর থেকে প্রথমবারের মতো প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে ব্রেইল বই ছাপিয়ে বিতরণ করবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এসব বই ছাপার কাজ শেষ পর্যায়ে। এ ছাড়া পাঁচটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রাক্-প্রাথমিক স্তরের শিশুদের তাদের মাতৃভাষায় প্রথমবারের মতো বই দেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল রোববার রাজধানীর মাতুয়াইলে বিনা মূল্যের পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি একাধিক ছাপাখানা ঘুরে দেখেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন, এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহাসহ কয়েকজন কর্মকর্তা।
এনসিটিবির দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ব্রেইল বই দেওয়া হচ্ছে ৯ হাজার ৭০৩ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে। আগে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে কিছু ব্রেইল বই দেওয়া হতো। আর পাঁচটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রায় ২৪ হাজার শিক্ষার্থীকেও বই দেওয়া হবে। এই ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলো হলো চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা (ককবরক), গারো ও ওঁরাও (সাদরি)। চাকমা ও মারমা ভাষার বইগুলো তাদের নিজস্ব লিপিতে লেখা। বাকি তিনটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বইয়ের কোনোটি বাংলা লিপিতে, কোনোটি রোমান হরফে।
এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, কয়েক দিন আগে এসব বই ছাপার কাজের দরপত্র হয়ে গেছে। শিগগির কার্যাদেশ দেওয়া হবে। অন্যান্য শিশুর মতো এই শিশুরাও বছরের শুরুতে মাতৃভাষায় পড়ার সুযোগ পাবে। এবার শুধু প্রাক্-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় বই দেওয়া হবে। ২০১৮ সালে প্রথম শ্রেণি ও এর পরের বছর দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বইও মাতৃভাষায় ছাপিয়ে বিনা মূল্যে বিতরণ করা হবে। তবে এরপর ধীরে ধীরে সবাইকে জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বই পড়তে হবে।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বই দেওয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী গতকাল বলেন, এবার হয়তো তথ্যের অভাবে সব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে বই দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না। তবে এ বিষয়ে শুমারি চলছে। সে অনুযায়ী পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এবার প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত মোট ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫ কপি বই ছাপানো হচ্ছে। গতবারের চেয়ে এবার বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে ২ কোটি ৮৪ লাখ ৩৪ হাজার ২৭৩টি। বই ছাপার কাজ পুরোদমে চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সব বই ছাপিয়ে মাঠপর্যায়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে এবং প্রতিবছরের মতো এবারও বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা বই পাবে।
এনসিটিবির দুজন কর্মকর্তা বলেন, মাধ্যমিক স্তরের বই প্রায় ৮৪ শতাংশই ছাপা হয়ে গেছে। গতকাল সকালে ভারতে ছাপানো প্রাথমিকের প্রায় ৯২ লাখ বই বেনাপোলে এসেছে। ফলে প্রাথমিকের বইও বেশির ভাগ ছাপা হয়ে গেছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন কারণে গতবারের কাগজের মান অনেক ক্ষেত্রে ঠিক করা যায়নি। তাই এবার যাতে সেটা আর না হয়, সে জন্য তাঁরা সতর্ক রয়েছেন।
সরকার ২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীকে বিনা মূল্যে বই দিচ্ছে।