দুদকে অভিযোগ কমেছে, অভিযানের সংখ্যাও কম

বেসিক ব্যাংক, হল–মার্ক ও স্বাস্থ্য খাতের আলোচিত দুর্নীতির অনেক মামলার তদন্ত বছরের পর বছর ঝুলে আছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সাধারণ মানুষ যে দুর্নীতির অভিযোগ করতেন, সে সংখ্যাটি কমে গেছে। ব্যাপকভাবে কমেছে দুদকের নিজস্ব অভিযানও। এমন প্রেক্ষাপটে আজ ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২১ উদ্‌যাপনের আয়োজন করেছে সংস্থাটি।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে দুদকে মোট ১১ হাজার ৮২৮টি অভিযোগ জমা পড়ে; অর্থাৎ মাসে জমা পড়েছে গড়ে ১ হাজার ১৮৩টি অভিযোগ। ২০২০ সালে মাসে গড়ে ১ হাজার ৫৪১টি অভিযোগ জমা পড়েছিল। ওই বছর মোট জমা হওয়া অভিযোগের সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৪৮৯।

এদিকে ২০২০ সালে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৪৮৭টি অভিযান পরিচালনা করে। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে সংখ্যাটি নেমেছে ১১১–তে।

এ বিষয়ে দুদকের সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, করোনার সময়ে ‘লকডাউন’ ও নতুন কমিশন আসার পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান ও তদন্ত বিলম্বিত হয়েছে। বর্তমান কমিশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অনিষ্পন্ন অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষ করতে কাজ করছে।

অবশ্য সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুর্নীতির নতুন অভিযোগ আমলে নিয়ে মাঠে নামার চেয়ে পুরোনো অভিযোগের অনুসন্ধান, তদন্ত ও অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করতেই বেশি সময় কাটছে দুদকের। যদিও বেসিক ব্যাংক, হল–মার্ক ও স্বাস্থ্য খাতের আলোচিত দুর্নীতির অনেক মামলার তদন্ত বছরের পর বছর ঝুলে আছে। দুদকের এক হিসাবে দেখা যায়, তাদের হাতে এখন মেয়াদোত্তীর্ণ অনুসন্ধান ও মামলার সংখ্যা ১ হাজার ৩২২, যা মোট অনুসন্ধান ও মামলার এক-চতুর্থাংশ।

দুর্নীতি দমন কমিশনের বিধি অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে অনুসন্ধানকাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। এরপর যুক্তিসংগত কারণ উল্লেখ করে আরও ৩০ দিন সময় নেওয়া যায়। তদন্তের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়সীমা ১৮০ দিন। পরে তা ৯০ দিন বাড়ানো যায়।

দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তে বছরের পর বছর কেটে যাওয়া নিয়ে সম্প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্টও। দুদকের এক মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের উচিত নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অভিযোগের অনুসন্ধান বা তদন্ত শেষ করে অভিযুক্তকে বিচারের আওতায় আনা এবং দক্ষতার সঙ্গে বিচারকাজ শেষ করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। তাহলেই দুর্নীতি ও দুর্নীতিচর্চা নির্মূল হবে।

এ বিষয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এত অনুসন্ধান ও মামলা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার প্রধান কারণ দুদকের সক্ষমতার ঘাটতি। তদুপরি দুদকের একশ্রেণির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও মামলার তদন্তকে নিজেদের সুবিধা অর্জনের উপায় হিসেবে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, অভিযোগকারীরা প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রতিকার পাচ্ছেন না, অভিযোগ কমার এটাও কারণ হতে পারে।

ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, দুদকের উচিত আরও কার্যকরভাবে অভিযান পরিচালনা করা।

এদিকে দুদক জানিয়েছে, দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রাজধানীর নয়টি স্থানে একযোগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন হবে। পরে বেলা ১১টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভা হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন থাকবেন বলে কথা রয়েছে।