দুখিনী নন্দিনীর নতুন দুঃখ করোনা
নন্দিনী রানী। ছোটবেলা থেকে সংগ্রাম করে বড় হওয়া উপকূলীয় এক নারী। বরগুনা সদর উপজেলার মৃত নগেন চন্দ্র দাসের পাঁচ মেয়ে এবং এক ছেলের মধ্যে নন্দিনী তৃতীয়। নগেন চন্দ্র নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যাওয়া স্বল্প আয়ের বাবাদের একজন। মুচির কাজ করে কোনো রকম সংসার চালাতেন। কৈশোরে আসতে না আসতেই নন্দিনী হারান ক্যানসারে আক্রান্ত মাকে। অভাবের সংসার, পড়ালেখা না করিয়েই নন্দিনীসহ অন্য মেয়েদের বাল্যবিবাহ দিতে বাধ্য হন নন্দিনীর বাবা। মেয়েদের বিয়ের পরপরই মায়ের মতো নন্দিনীর বাবাও চলে যান ওপারে।
নন্দিনীর বিয়ে হয় বরগুনা সদর উপজেলার ৮ নম্বর ইউনিয়নের ক্রোক এলাকার ভিটামাটিহীন অনিল দাসের সঙ্গে। অনিল দাসও তাঁর বাবা–মাকে হারিয়েছেন সেই ছোটবেলায়। অনিলের ছোট দুটি ভাই। বাপ-মাহারা ভাইদের খুব কষ্ট করে বড় করছেন তিনি। খেয়ে না–খেয়ে সরকারি জমির ওপর ছোট একটি খড়ের কুটিরে দিন পার করছিলেন তাঁরা। হঠাৎ তিন ভাইয়ের টানাটানির সংসারে বউ হয়ে আসেন নন্দিনী। ভেবেছিলেন স্বামীর সংসারে এসে হয়তো পাবেন একটু সুখের দেখা। কিন্তু না, এখানে এসেও কষ্টের দিন ফুরায় না নন্দিনীর। আর তাই কষ্টের সঙ্গে লড়াই করেই এগিয়ে চলছিলেন তিনি।
নন্দিনীর স্বামী মুচির কাজ করে অনেক কষ্টে সংসার চালান দেখে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয় থেকে দরজির কাজ শেখেন নন্দিনী। কাজ শেখার পর আর বসে থাকতে হয়নি। এলাকার মানুষকে দরজির সেবা দিয়ে ভালোই আয় হচ্ছিল। যেন একটু একটু করে দুঃখের বদলে সুখ ফিরছে নন্দিনীর জীবনে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ, সংসারের খরচ মিটিয়ে স্বামীর কাছেও আর্থিক সঞ্চয় জমা হচ্ছিল তাঁর। কিন্তু চলমান করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে নন্দিনী রানী এবং অনিল দাসের ভাগ্যে মিলছে না কাজ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নন্দিনী-অনিলের পরিবার।
কথা হলে নন্দিনী জানান তাঁর স্বপ্ন ও মানবেতর জীবনের গল্প। তিনি বলেন, ‘আমার দুই ছেলে। আমি ওদের নিয়ে স্বপ্ন দেখি। ওরা পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হবে। আমাদের নিজস্ব একটা বাড়ি হবে। কিন্তু এখন তো ছেলেমেয়েদের মুখে দুবেলা অন্নজল তুলে দিতেই পারছি না। আর তো পড়ালেখার খরচ...’ বলেই কেঁদে ফেলেন তিনি।
বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. মাসুমা আক্তার বললেন, ‘করোনার প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত মানুষকে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা, খাদ্যসহায়তাসহ বিভিন্নভাবে সাহায্য–সহযোগিতা করেছি। আত্মকর্মসংস্থানমূলক পেশায় নিয়োজিত বিপর্যস্ত নারীদের আমরা সরকারিভাবে সহায়তা প্রদান করার চেষ্টা করছি।’