প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ৪ হাজার ২৮০ কোটি টাকার ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন (এলডিডি) প্রকল্প’ শুরু হয় ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু গত নভেম্বর পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। মূলত গাড়ি কেনার মধ্যেই এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ সীমিত। প্রকল্পের জন্য ১টি ফোর হুইলার, ৫টি ডাবল কেবিন পিকআপ, ১টি মাইক্রোবাস ও ৪১৮টি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে।
এই প্রকল্পসহ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের ‘দুরবস্থা’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব কমিটি। কমিটি মনে করছে, প্রকল্পকাজে ধীরগতি এবং আর্থিক সুশাসন না থাকায় সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ব্যর্থ হচ্ছে।
আজ রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে কমিটির বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩৮টি প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এর মধ্যে ১৩টি প্রকল্পের অগ্রগতি ২৫ শতাংশের নিচে। ৮টি প্রকল্পের অগ্রগতি ৫০ শতাংশের নিচে আর ১৬টি প্রকল্পের অগ্রগতি ৫১-১০০ শতাংশের মধ্যে। একটি প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আব্দুস শহীদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যয় ব্যবস্থাপনা সঠিক না হলে সরকারের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় না। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সরাসরি জনগণের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের দুরবস্থার কারণে মানুষের আস্থা কমছে।
এলডিডি প্রকল্প প্রসঙ্গে আব্দুস শহীদ বলেন, ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত মাত্র ৬ শতাংশ কাজ হয়েছে। গাড়ি কেনা ছাড়া আর কোনো কাজই করেনি। এই প্রকল্পের অধীন করোনাভাইরাস মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনা দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো দেওয়া হয়নি। আগামী এক মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের সার্বিক কাজ নিয়ে কমিটিতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে কমিটির একজন সদস্য বলেন, প্রকল্পের পরিচালক একজন যুগ্ম সচিব। তিনি সরকারি ঋণসুবিধায় গাড়ি পেয়েছেন। আবার প্রকল্পের গাড়িও কেন ব্যবহার করবেন? আরেকজন বলেন, মোটরসাইকেল দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু তিনি তাঁর এলাকায় কোনো মোটরসাইকেল দেখেননি। আর এগুলো কি প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে? এমন প্রশ্নও রাখেন। প্রকল্প পরিচালক বলেন, তিনি গাড়ির জন্য ৫০ হাজার টাকা করে পাওয়ার কথা। তবে তিনি নিচ্ছেন ২৫ হাজার টাকা।
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পে গাড়ি কেনা বাদে প্রকল্পটির আর কোনো বাস্তব অগ্রগতি না থাকা এবং প্রকল্পের গাড়ি, মোটরসাইকেল প্রকল্পের কাজের বাইরে ব্যবহার নিয়ে কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করে।
মৎস্য অধিদপ্তর থাকার পরও মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সংসদীয় কমিটি। বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, পিপিআর রোগ নির্মূল এবং ক্ষুরা রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প শুরু হয় ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি। ২০২২ সালে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ২ শতাংশ। সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের জুনে। ২০২৩ সালের জুনে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা, কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ১০ শতাংশ।
আব্দুস শহীদের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, এ বি তাজুল ইসলাম, বজলুল হক, আহসান আদেলুর রহমান, ওয়াসিকা আয়শা খান ও খাদিজাতুল আনোয়ার বৈঠকে অংশ নেন।