কক্সবাজার থেকে তৃতীয় দফায় নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরপ্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। আজ ও কাল শুক্রবার সেখানে পাঠানো হবে ৩ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে। গতকাল বুধবার স্থানান্তরের জন্য কয়েক শ জনকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আনা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা প্রথম আলোকে বলেন, ভাসানচরে পাঠানোর জন্য অন্তত ৩ হাজার রোহিঙ্গা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাদের দুই ভাগে পাঠানো হবে। শেষ মুহূর্তে কয়েক শ জন বাড়তেও পারে।
জানা গেছে, প্রথম দিন উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে গাড়িতে করে ভাসানচরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম পাঠানো হবে ১ হাজার ৭০০ জনকে। দ্বিতীয় দিন যাবে আরও ১ হাজার ৩০০ জন।
জানা গেছে, প্রথম দিন উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে গাড়িতে করে ভাসানচরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম পাঠানো হবে ১ হাজার ৭০০ জনকে। দ্বিতীয় দিন যাবে আরও ১ হাজার ৩০০ জন।
স্থানান্তর প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সরকারি একটি সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক এমন প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্য থেকে তৃতীয় দফায় প্রায় ৭০০ পরিবারের অন্তত ৩ হাজার জনকে ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে জড়ো করা হচ্ছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় (আরআরআরসি) সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক নানা চাপের মুখেও সরকার ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দুই ধাপে ৩ হাজার ৬৪৬ জনকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়। স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গার তালিকা বড় হওয়ায় এবার দুই দিন পাঠানো হবে। ভাসানচরের আশ্রয়শিবিরে মোট ১ লাখ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে সরকারের।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা শুরু হলে পরের কয়েক মাসে অন্তত ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।
‘চাপে নয়, স্বেচ্ছায় যাচ্ছি’
উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প থেকে গতকাল বিকেলে পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে ভাসানচরে যেতে উখিয়া ডিগ্রি কলেজে আসেন রোহিঙ্গা রফিক উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘কারও চাপে নয়, আমরা স্বেচ্ছায় ভাসানচরের আশ্রয়শিবিরে চলে যাচ্ছি।’
১৯ জানুয়ারি বিকেলে উখিয়ার কুতুপালং শিবির পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। পরে তাঁর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পের ৭০ জন রোহিঙ্গা নেতা (মাঝি)। বৈঠকে তাঁরা ভাসানচরে যেতে নিজেদের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন।
টেকনাফের শামলাপুর ক্যাম্প থেকে আসা ছৈয়দ হোসেন বলেন, কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরগুলো বেশির ভাগ পাহাড়ের ঢালুতে তৈরি। বর্ষার সময় পাহাড়ধসে ঘরবাড়ি বিলীন হয়, হতাহতের ঘটনা ঘটে। আর উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পের নবী হোসেন বলেন, আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও বখাটের উৎপাত বেড়েছে। খুনখারাবি, মুক্তিপণের জন্য অপহরণ, নারী ধর্ষণ ও ইয়াবার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে প্রায়ই মারামারির ঘটনা ঘটছে। গত মঙ্গলবারও দুটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী দলের মধ্যে গোলাগুলিতে এক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাই ঝুঁকি এড়াতে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
১৯ জানুয়ারি বিকেলে উখিয়ার কুতুপালং শিবির পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। পরে তাঁর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পের ৭০ জন রোহিঙ্গা নেতা (মাঝি)। বৈঠকে তাঁরা ভাসানচরে যেতে নিজেদের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন।
উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জালাল আহমদ বলেন, ভাসানচরের উন্নত পরিবেশ ও থাকা–খাওয়ার সুব্যবস্থার কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখ থেকে শোনার পর দলে দলে রোহিঙ্গারা ভাসানচর যেতে নাম তালিকাভুক্ত করাচ্ছে।