তুলির বাড়িতে চলছে মাতম

তুলি আখতার

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, তাই পরিবারের অভাব-অনটন কাটিয়ে উঠতে এক সপ্তাহ আগে নারায়ণগঞ্জের হাসেম ফুডসের কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছিলেন হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার ভাদিকারা গ্রামের তুলি আখতার (১৪) ও তার বড় বোন লিমা আখতার (১৮)। ভাগ্যক্রমে লিমা রক্ষা পেলেও ছোট বোন তুলি এখনো নিখোঁজ।

এ নিয়ে ভাদিকারা গ্রামের আবদুল মান্নানের বাড়িতে চলছে মাতম। পরিবারের এক সদস্যকে হারিয়ে কান্না থামছে না বাড়ির লোকজনসহ স্বজনদের। গ্রামের মানুষও এ ঘটনায় শোকাহত।

শুক্রবার রাতে যখন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় আগুনের সূত্রপাত ঘটে, তখন লিমা ভবনের নিচতলায় কাজে ছিলেন। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। কিন্তু তাঁর ছোট বোন তুলি কাজে ছিল একই ভবনের চতুর্থ তলায়। ছয়তলা ভবনের পুরোটায় আগুন ছড়িয়ে গেলে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সুযোগ ছিল না। শ্রমিকেরা প্রাণভয়ে ছুটতে থাকেন যাঁর যাঁর মতো করে। লিমা ভবনের বাইরে ছোট বোনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু তাঁর বোন আর ফিরে আসেনি। এ খবর বাড়িতে এসে পৌঁছালে তুলির বাবা তাঁর এক আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন মেয়ের সন্ধান পেতে। আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত নিখোঁজ তুলির সন্ধান মেলেনি।

তুলি লেখাপড়া করত উপজেলার কালাউক উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে। তার বড় বোন লিমা লাখাই মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী।

তাঁদের অপর বড় বোন হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী জুহি আখতার বলেন, গত ৩০ জুন স্কুলে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েই তাঁর বোন তুলি লিমার সঙ্গে ঢাকায় যায় কাজে যোগ দিতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, পাশাপাশি সংসারের অভাব-অনটন চলছে। যে কারণে পড়াশোনার ফাঁকে তাঁর দুই বোন ওই কারখানায় কাজে গিয়েছিল। কথা ছিল তুলি কোরবানি ঈদের আগেই বাড়িতে ফিরবে। কিন্তু তার আর ফেরা হলো না। তুলি পড়াশোনায় ভালো ছিল। স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষা অর্জনের। সেই স্বপ্ন আগুনে পুড়ে গেল।

তুলির বাবা আবদুল মান্নান বলেন, তিনি মেয়ের সন্ধানে ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন। কিন্তু এখনো মেয়েকে খোঁজে পাননি। তিনি অন্তত মেয়ের লাশটা পেতে চান।
তুলির মামাতো ভাই লিমন মিয়া জানান, তুলিরা ৬ বোন ও ২ ভাই। এঁদের মধ্যে তুলি পঞ্চম। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে গিয়ে এ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে মেয়েটি।