তিস্তা চরে সবুজের ঢেউয়ে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন
লালমনিরহাটের তিস্তা চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। সমুদ্রের ছোট ছোট ঢেউয়ের মতো খেলে যাচ্ছে সবুজ পাতাগুলো। আর এমন সবুজ সমুদ্রের ঢেউয়ে দুলে উঠছে কৃষকের স্বপ্ন। কদিন পরেই সবুজ চারাগুলো হলুদ বর্ণ ধারণ করবে।
এবার তিস্তার বালু চরে মিষ্টিকুমড়ার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা। তিস্তার বালুচর এখন আর অভিশাপ নয়। বালুচরে মিষ্টিকুমড়া চাষ করে তিস্তাপারের হাজারো কৃষক এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
গতবার বন্যায় তিস্তাভাঙনে অনেক পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়ে। বালু পড়ে নষ্ট হয়ে যায় ফসলি জমি। বন্যার পানির সঙ্গে আসা বালু জমিতে পতিত হয়ে জমিকে চাষের অনুপযোগী করে তোলে।
তবে কৃষকেরা কঠোর পরিশ্রম করে জমির ওপরের বালু মাটি তুলে এঁটেল মাটি বের করে চাষ করেন মিষ্টিকুমড়া, পিয়াঁজ, মরিচ, রসুন, ক্ষীরা, মশুর ডালসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। বালুচরে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে অনেকে সাফল্যের মুখ দেখছেন। তিস্তার চরে মিষ্টিকুমড়ার চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখছেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তাপারের গোর্ধন এলাকার বাসিন্দা মোফাজ্জল হোসেন প্রায় চার একর জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ করেছেন। আশানুরূপ দাম পেলে সাফল্যের মুখ দেখবেন।
এদিকে সবাই যেখানে তিস্তা চরে ভুট্টা চাষ নিয়ে ব্যস্ত, সেখানে কৃষক মুকুল মিয়া ভিন্নধর্মী ফসল চাষ করে ভিন্নতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এতে ভুট্টাচাষিদের চেয়ে বেশি লাভবান হবেন বলে আশা করছেন তিনি।
কৃষক মুকুল মিয়া জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে দেওয়া হয়েছে কুমড়া চাষের বীজ ও সার। এবারে তিস্তার বালু চরে মিষ্টিকুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। একেকটি গর্তে চারটি করে চারা লাগিয়েছেন। প্রতিটি গাছ থেকে ১০ থেকে ১৫টি করে কুমড়া উঠবে বলে তিনি জানান। ভালো দাম পেলে বিক্রি করে দেবন।
আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) আলিনুর রহমান জানান, চরের জমিতে প্রতিবছর ভুট্টা, বাদাম, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচ, কুমড়া, ধান, সবজিসহ বিভিন্ন জাতীয় ফসল চাষ হয়ে থাকে। চমৎকার ফলনও পেয়ে থাকেন কৃষকেরা। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট এলাকার আওতায় চরের জমিতে গিয়ে কৃষকদের মাঝেমধ্যে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যদি নদী শাসনের মাধ্যমে চরের এসব ফসলি জমিতে পরিকল্পিত চাষাবাদ করার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে লালমনিরহাট কৃষি অর্থনীতি আরও বেশি সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।’