তিন সহায়তায় বাল্যবিয়ে ২৫ শতাংশ কমেছে

কিশোরীদের শিক্ষা সহায়তা দিয়ে, জেন্ডার সচেতন করে এবং জীবনমুখী দক্ষতা বাড়িয়ে বাল্যবিয়ে ২৫ শতাংশ কমানো সম্ভব হয়েছে বলে এক গবেষণায় দেখা গেছে। গবেষকেরা বলছেন, বাল্যবিয়ে কমাতে বা বন্ধ করতে হলে স্কুলে পড়া অবস্থাতেই সেবাগুলো কিশোরীদের কাছে পৌঁছাতে হবে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এই গবেষণার তথ্য প্রকাশ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান পপুলেশন কাউন্সিল, পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি) এবং এনাবেলিং ডেভেলপমেন্ট ইনটেলিজেন্স যৌথভাবে নয় হাজারের বেশি কিশোরীকে নিয়ে এই গবেষণা করেছে। এতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে নেদারল্যান্ডস সরকার।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘আমি বারবার বলছি, নতুন আইনে বিয়ের বয়স মেয়েদের জন্য ১৮ এবং ছেলেদের জন্য ২১ বছরই থাকছে।’ তিনি বলেন, বাল্যবিয়ে কমাতে সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যায়।
মূল উপস্থাপনায় পপুলেশন কাউন্সিলের ‘বালিকা’ প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর সাজেদা আমিন বলেন, অনেকেই জানেন, এশিয়ার মধ্যে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। ঠিক কী করলে বাল্যবিয়ে কমবে, এটা জানা ছিল না। এ বিষয়ে সারা বিশ্বে গবেষণাও কম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, স্কুল থেকে মেয়েদের ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ ইংরেজি ও অঙ্কে খারাপ করা। যে মেয়ে একবার ঝরে পড়ে, তাকে আবার স্কুলে পাঠানো কঠিন। তার অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি।’
গবেষকেরা জানান, ‘বালিকা’ (বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ফর লাইফ স্কিলস, ইনকাম অ্যান্ড নলেজ ফর অ্যাডোলেসেন্ট) প্রকল্পের আওতায় খুলনা, সাতক্ষীরা ও নড়াইল জেলায় এই গবেষণা শুরু হয় ২০১২ সালের নভেম্বরে, শেষ হয়েছে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে। গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত নয় হাজার কিশোরীকে দুই ভাগে (আর্ম) ভাগ করা হয়। ১৮ মাস ধরে প্রথম ভাগের কিশোরীদের শিক্ষায় সহায়তা দেওয়া হয়, বিশেষ করে ইংরেজি ও অঙ্কে। তাদের জেন্ডার ও অধিকার বিষয়ে সচেতন করা হয়। পাশাপাশি জীবিকা অর্জনের কিছু প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ভাগের কিশোরীদের এর কিছুই করা হয়নি। সব কিশোরীর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রথম ভাগের কিশোরীদের মধ্যে বিয়ের হার দ্বিতীয় ভাগের কিশোরীদের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম।
স্বাগত বক্তব্যে পপুলেশন কাউন্সিলের দেশি পরিচালক ওবায়দুর রব বলেন, এ দেশে প্রতি তিনটি বিয়ের দুটি বাল্যবিয়ে। ১৫/২০ বছর ধরে বাল্যবিয়ে কমানোর কথা বলা হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে তেমন অগ্রগতি দেখা যায়নি।
অনুষ্ঠানে ইউনিসেফের প্রতিনিধি এডোয়ার্ড বেগবেদার বলেন, বাল্যবিয়ে কমাতে গবেষণাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। তিনি বলেন, স্কুল ও কলেজে মেয়েদের নিরাপত্তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন মিস মার্টিন ভ্যান, পিএসটিসির নির্বাহী পরিচালক নূর মোহাম্মদ বক্তব্য দেন। গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন পর্বে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট ফর গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ফেলো সিমিন মাহমুদ।