সারা দেশের মতো তিন পার্বত্য জেলায়ও এবার তরুণ অর্থাৎ নতুন ভোটারেরা জয়–পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখবে। এই তরুণেরা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চায়। তাঁরা পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন, সম্প্রীতি ও অধিকার সুরক্ষামূলক উন্নয়ন চান। এসব চিন্তা–ভাবনা মাথায় রেখে তরুণেরা ভোটকেন্দ্রে যাবেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি আসনে গত পাঁচ বছরে নতুন ভোটার হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার। এর মধ্যে খাগড়াছড়িতে ৬০ হাজার, বান্দরবানে ৩০ হাজার এবং রাঙামাটিতে ৪৬ হাজার।
খাগড়াছড়ি
নয়টি উপজেলা এবং তিনটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত খাগড়াছড়ি আসনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল ৩ লাখ ৮০ হাজার ৮৫৭ জন। এবারে ভোটার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে তরুণ ভোটারের সংখ্যা ৬০ হাজারের বেশি।
মহালছড়ি, পানছড়ি, গুইমারা ও মাটিরাঙ্গাসহ কয়েকটি উপজেলায় তরুণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাহাড়ে সংঘাত বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা চায় তাঁরা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকবে এবং কর্মসংস্থানসহ ঘরে বসেই উচ্চশিক্ষার সুযোগ যে করে দেবেন এমন প্রার্থীকে ভোট দেবেন তাঁরা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পানছড়ির দেবদত্ত চাকমা ও মহালছড়ির অচিংমং মারমা বলেন, ‘জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখে এসেছি সাম্প্রদায়িক সংঘাত আর রাজনৈতিক হানাহানি। আমাদের একটাই চাওয়া যে প্রার্থী এই সংঘাত বন্ধ করে পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখতে পারবেন এমন প্রার্থী জিতে আসুক।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মাটিরাঙ্গার মো. হোসাইন বলেন, গরিব শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে যে প্রার্থী জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেবেন তাঁকে ভোট দেবেন তিনি।
প্রার্থীরাও তরুণদের নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন। ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী নতুন কুমার চাকমা বলেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। বিএনপি প্রার্থী শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, খাগড়াছড়ির শিক্ষার্থী-তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা দিয়ে কর্মসংস্থান নিশ্চিত, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
খাগড়াছড়ির নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো হবে।
বান্দরবান
বান্দরবানে দশম সংসদ নির্বাচনের সময় মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ জন। এবার ভোটার ২ লাখ ৪৭ হাজার ৪৯৩ জন। এবার নতুন ভোটার ৩০ হাজার ৭৪৯ জন।
নতুন ভোটাররা সবার আগে পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন, শান্তি, সম্প্রীতি ও অধিকার সুরক্ষামূলক উন্নয়ন চান। তাঁরা বলেছেন চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি-সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা আসবে না।
বান্দরবান বাজারের তরুণ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মামুন এবার প্রথম ভোট দেবেন। মামুন বলেন, পাহাড়ি-বাঙালির সম্প্রীতি ও সকল রাজনৈতিক দলের সহনশীল সহাবস্থানের আশায় এবার প্রথম নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন।
সদ্য উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ জেকি মারমার নির্বাচন নিয়ে কোনো আশা-ভরসা নেই। মেহ্লাচিং খেয়াং তাঁদের স্বপ্ন দেখাতে জানেন এমন প্রার্থীকে ভোট দেবেন। তাঁর মতে, সে জন্য প্রথম দরকার মানসম্মত শিক্ষা।
থানচি উপজেলার দুর্গম রেমাক্রি ও তিন্দুতে এখনো মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক নেই। রেমাক্রির কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্রী কেটি বম এ বিষয়ে যিনি কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেবেন তাঁকে ভোট দেবেন।
রাঙামাটি
রাঙামাটি আসনে এবার ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৮ হাজার ২১৭ জন। দশম সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৪৫ জন। নতুন ভোটার ৪৬ হাজার ৮৭২ জন।
নিজেদের স্বার্থে নয়, সকল জনগণের জন্য কাজ করবেন এমন প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানালেন তরুণ ভোটাররা। রাঙামাটি শহরের কল্যাণপুর এলাকার নতুন ভোটার জ্যোতি পাংখোয়া বলেন, পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রয়োজন, তা না হলে শৃঙ্খলা থাকবে না।
রাঙামাটি শহরের টিঅ্যান্ডটি এলাকার পূর্ণা চাকমা বলেন, যিনি জনগণের মতামত নিয়ে কাজ করবে তাঁকে নির্বাচিত করতে হবে। এ ছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করবেন ও সৎ এমন প্রতিনিধি চায়। রিজার্ভ বাজার এলাকার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, পাহাড়ি-বাঙালি সহাবস্থান তৈরি করবে পারবেন এমন জনপ্রতিনিধি দরকার।