ঢাবির হলে ‘গেস্টরুম নির্যাতনে’ জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীদের বিচার দাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলে প্রথম বর্ষের (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) এক শিক্ষার্থীকে হলের গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে মানসিক নিপীড়নের ঘটনার বিচার দাবি করেছে তিনটি ছাত্রসংগঠন।
‘গেস্টরুম নির্যাতনের’ এ ঘটনাকে ক্যাম্পাস ও হলে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে এসব ছাত্রসংগঠন।
গত বুধবার রাতে বিজয় একাত্তর হলের গেস্টরুমে (অতিথিকক্ষে) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র আকতারুল ইসলামকে মানসিক নিপীড়ন করেন ছাত্রলীগের ছয় কর্মী। এতে জ্ঞান হারান তিনি। এ ঘটনার বিচার দাবি করা তিন ছাত্রসংগঠন হলো ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) ও ছাত্রলীগ-বিসিএল।
এক বিবৃতিতে বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সোহেল রানা ও সাধারণ সম্পাদক বি এম কাউসার বলেন, ‘বুধবারের নির্যাতনের ঘটনাটি নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে নিয়মিত পরিচালিত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমেরই অংশ। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আকতারুলের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছে ছাত্রদল। সেই সঙ্গে নির্যাতনকারী ও তাঁদের মদদদাতা সবাইকে আইনের আওতায় এনে ক্যাম্পাস এবং হলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানাই।’
ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাজীব কান্তি রায় ও সাধারণ সম্পাদক সুহাইল আহমেদ পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ‘নির্যাতনের ঘটনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক। বিজয় একাত্তর হলে বুধবারের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে গেস্টরুমে শিক্ষার্থী-নির্যাতন বন্ধ করাসহ অবিলম্বে সন্ত্রাস-দখলদারমুক্ত হল ও ক্যাম্পাস নিশ্চিতের দাবি জানাই।’
আরেক বিবৃতিতে ছাত্রলীগ-বিসিএলের কেন্দ্রীয় সভাপতি গৌতম চন্দ্র শীল ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মুক্তচিন্তাচর্চার প্রাণকেন্দ্রে নির্যাতনের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও হৃদয়বিদারক। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিজয় একাত্তর হলের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর এ ধরনের অমানুষিক নির্যাতনের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।’
এদিকে ওই ঘটনায় বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী আকতারুল ইসলাম। অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রাধ্যক্ষ আবদুল বাছির।
আকতারুলের অভিযোগ, নির্যাতনে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের কর্মীরা হলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র কামরুজ্জামান রাজু, ইতিহাস বিভাগের ছাত্র হৃদয় আহমেদ ওরফে কাজল, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র ইয়ামিম ইসলাম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ওমর ফারুক ওরফে শুভ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র সাইফুল ইসলাম ও লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্র সাইফুল ইসলাম ওরফে রোহান। তাঁরা সবাই দ্বিতীয় বর্ষের (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।
অভিযোগের বিষয়ে সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ন্যূনতম অসদাচরণের সুযোগ নেই। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে বিজয় একাত্তর হল প্রশাসনকেও ঘটনার তদন্ত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই।’