ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় পরিবর্তন ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে, বদলে যাবে ইউনিটের নামও

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

প্রতিবারের মতো আসন্ন ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষেও পাঁচটি ইউনিটে (ক, খ, গ, ঘ ও চ) ভর্তি পরীক্ষা নেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে পরীক্ষা হবে চারটি ইউনিটে।

এদিকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ইউনিটের নামও বদলে যাবে। নামগুলো হবে বিজ্ঞান ইউনিট, ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট, চারুকলা ইউনিট এবং কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট।

বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ভর্তি কমিটির এক বিশেষ সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান এতে সভাপতিত্ব করেন। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ঘ ইউনিট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুষদের শিক্ষকদের আপত্তির মুখে ভর্তি কমিটির এ সভা হয়। এর আগে সকালে একই বিষয়ে ডিনস কমিটির বিশেষ সভা হয়।

সাধারণ ভর্তি কমিটির সভার নথি সংগ্রহ করেছে প্রথম আলো। এতে সিদ্ধান্ত অংশে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীরা আগের মতোই বিদ্যমান বিভিন্ন ইউনিটভিত্তিক (ক, খ, গ, ঘ ও চ) ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমন অবস্থায় সংস্কারকৃত নতুন ইউনিটভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর করলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই সিদ্ধান্তটি ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের পরিবর্তে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর করার সুপারিশ করা হয়েছে। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে আগের মতোই পাঁচটি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।

নথিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি ইউনিটের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। ভর্তি পরীক্ষার ইউনিটগুলোর নাম সংশোধন করা হয়েছে। ইউনিটগুলো হবে বিজ্ঞান ইউনিট, ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট, চারুকলা ইউনিট এবং কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট। বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা বিভাগ পরিবর্তনের জন্য কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। মানবিক শাখার শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বা বাণিজ্য বিষয়ে ভর্তির জন্য কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গেই গণিত-পরিসংখ্যান অথবা অর্থনীতি-হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পারবেন।

ডিনস সাব-কমিটির সুপারিশ
ঘ ইউনিট বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট হিসেবে পরিচিত। এ ইউনিট বন্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ৭ ফেব্রুয়ারি সাধারণ ভর্তি কমিটির এক সভায় বিভাগ পরিবর্তনের বিকল্প কৌশল তৈরির জন্য ডিনস সাব-কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন উপাচার্য।

এ কমিটির সুপারিশ নিয়ে বুধবার সকালে ডিনস কমিটি ও বিকেলে সাধারণ ভর্তি কমিটির সভায় আলোচনা হয়। ডিনস সাব–কমিটির সুপারিশ ছিল: ক (বিজ্ঞান), খ (কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান) ও গ (ব্যবসায় শিক্ষা) ইউনিটের পরীক্ষায় নিজ নিজ বিষয়ের ভর্তি পরীক্ষার মধ্যেই বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ রাখা যেতে পারে। অর্থাৎ ক ও গ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের পরীক্ষা এবং খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে গণিত-পরিসংখ্যান অথবা অর্থনীতি-হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। এতে সব বিকল্প খোলা থাকে।

রেজিস্ট্রার ভবন থেকে পাওয়া নথিতে বলা হয়েছে, এ সুপারিশ ডিনস কমিটির বিশেষ সভায় উপস্থাপনের পর আইন অনুষদের ডিন মো. রহমত উল্লাহ জানান, আইন অনুষদকে কোনো ইউনিটের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তিনি খ ও ঘ ইউনিটকে একত্র করে এর নাম কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট করার প্রস্তাব দেন। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন জিয়া রহমান বিভাগ পরিবর্তনের জন্য ডিনস সাব-কমিটির সুপারিশের সঙ্গে কিছুটা ভিন্নমত জানিয়ে বলেন, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীদের বিভাগ পরিবর্তন নিজ নিজ ইউনিটের মাধ্যমে না হয়ে খ ও ঘ ইউনিট একত্র হওয়ার পর যে ইউনিট হবে, সেই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে হওয়া অধিকতর যৌক্তিক। ঘ ইউনিট বিলোপ না করার পক্ষে নিজের অনুষদের শিক্ষকদের দাবিও তুলে ধরেন তিনি। সভা থেকেই ইউনিটগুলোর বিষয়ভিত্তিক নামকরণের সুপারিশ আসে।

ভর্তি কমিটির সভা শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর জানায়, সভায় সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয়ের জন্য উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো ভবিষ্যতে শুধু একটি ‘স্ট্যান্ডার্ডাইজড টেস্টের’ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে ভাবার জন্য ডিনদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ, সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।