ঢাবি এলাকায় সরব মেনন, নীরব আব্বাস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এলাকায় ‘নৌকার’ প্রার্থীর ব্যাপক প্রচার থাকলেও ‘ধানের শীষের’ প্রার্থীর কোনো সাড়াশব্দ নেই।
রমনা, মতিঝিল ও পল্টন নিয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসনে মহাজোটের মনোনয়নে ‘নৌকা’ প্রতীকে লড়ছেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন৷ এই আসনে ঐক্যফ্রন্টের হয়ে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে লড়ছেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকা এই নির্বাচনী আসনের অন্তর্ভুক্ত৷ ক্যাম্পাস এলাকায় নৌকা প্রার্থীর প্রচারণা চললেও ধানের শীষের প্রার্থীর কোনো সাড়াশব্দ নেই৷ বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, প্রশাসনের সহায়তায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন তাদের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে ৷
নির্বাচনের বাকি ১০ দিন৷ প্রচারণা শুরু হয়েছে—তাও ১০ দিন হয়ে গেছে৷ সারা দেশের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়ও লেগেছে নির্বাচনী হাওয়া৷ এইএলাকার টিএসসি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা ও আবাসিক হলগুলোর সামনে শোভা পাচ্ছে নৌকার প্রার্থী রাশেদ খান মেননের পোস্টার৷ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে রোকেয়া হল থেকে উপাচার্য ভবন পর্যন্ত দেয়ালে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আঁকা হয়েছে গ্রাফিতি ৷
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসনে এবার মোট ভোটার দুই লাখ ৬৪ হাজার ৮৯৩৷ গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা সভা ও গণসংযোগ করেছেন মহাজোটের প্রার্থী রাশেদ খান মেনন৷ তাঁর পক্ষে মিনি ট্রাকে মাইকিং ও পোস্টারিং মিলিয়ে নিয়মিত জমজমাট প্রচারণা চলছে৷
আসনটিতে মোট ১৪ জন প্রার্থী। এলাকার কিছু কিছু জায়গায় ‘নৌকা’র পক্ষের পোস্টারিংয়ের পাশাপাশি ‘হাতপাখা’ প্রতীকে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী আবুল কাশেমের পোস্টারও ঝুলছে৷ তবে নির্বাচনী মাঠে এই এলাকায় একদমই অনুপস্থিত ধানের শীষের প্রার্থী মির্জা আব্বাস৷ এই এলাকার কোথাও তাঁর কোনো পোস্টার কিংবা ব্যানার তো নেই-ই, তাঁর পক্ষে কোনো ধরনের প্রচারও চোখে পড়েনি৷
শাহবাগ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মিন্টু অভিযোগ করেন, ‘অনেকবার রাতের বেলা আমরা পোস্টার লাগাতে ক্যাম্পাস এলাকায় গেছি৷ পুলিশ এসে পোস্টার নামিয়ে ফেলেছে এবং অনেককে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে৷ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন দুই দিক থেকেই আমরা বাধার শিকার হচ্ছি৷ সেগুনবাগিচা এলাকায় লিফলেট বিতরণ করতে গিয়ে আমাদের প্রার্থী ও ৩০-৩৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন৷’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিবের অভিযোগ,‘আমরা পোস্টারিং করতে পারছি না৷ গণসংযোগ করতে গেলে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ আমাদের বাধা দিচ্ছে৷ আমরা রাতে পোস্টার লাগালে রাতেই সেগুলো উধাও হয়ে যায়৷ তারা আমাদের প্রার্থী ও সমর্থকদের আক্রমণ করছে, আবার আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা দিচ্ছে ৷ হামলার শিকার হয়ে মামলা করতে গেলে আমাদের মামলা পুলিশ নিচ্ছে না৷’
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, 'শুধু ছাত্রলীগ নয়, শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সিদ্ধান্ত হচ্ছে- এই এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের সব রাজনৈতিক দল অবাধে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করবে৷ জামায়াতের যেসব প্রার্থীকে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে, তাদের বৈধতা বাতিল করলেই কেবল তাদের আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার স্বাগত জানাতে পারি ৷’
গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ আয়োজিত এক বিক্ষোভ কর্মসূচি ও সংহতি সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বিএনপি ও জামায়াতকে ইঙ্গিত করে হুঁশিয়ারি দেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কোথাও স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের উত্থান দেখলে তাদের “পিটিয়ে একদম জায়গায় শুইয়ে দেওয়া হবে”৷’
সেই কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারে বিশ্বাস করে না—এমন কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে দেওয়া হবে না৷’