২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ঢাকার দুটি আসনে ইভিএমে ভোটের চিত্র

ঢাকা-৬ ও ঢাকা-১৩—এ দুটি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে এবার ভোট নেওয়া হয়। প্রথমবার জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দেওয়া নিয়ে ভোটারদের মধ্যে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। দ্রুত ভোট দেওয়া যায় জানিয়ে অনেক ভোটার খুশি হন। আবার অনেকে আঙুলের ছাপ নিয়ে বিপত্তি দেখা দেওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করেন। এক ভোটারকে তো তিনবার হাত ধুয়ে এসে আঙুলের ছাপ দিতে হয়েছে। এর মধ্যে একটি কেন্দ্রে ইভিএম মেশিন সকাল থেকে চালু করা সম্ভব হয়নি বলে ভোট নেওয়া বন্ধ থাকে।

তবে ওই দুটি কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা বলেছেন, ভোট গ্রহণ শেষে ইভিএমের মাধ্যমে কেন্দ্রের ফলাফল আধা ঘণ্টার মধ্যেই দিয়ে দেওয়া সম্ভব। ব্যালট পদ্ধতিতে এটা চিন্তাই করা যায় না। কেন্দ্রের ফলাফলগুলো পাওয়ার পর দুই আসনের মোট ফলাফল ঘোষণা করতে হয়তো আর কিছু সময় বেশি লাগবে।

আজ রোববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৬ ও ঢাকা-১৩ আসনের একাধিক কেন্দ্রে গিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে। মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানার একাংশ নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৩ আসন এবং ওয়ারী, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, কোতোয়ালি ও বংশালের একাংশ নিয়ে গঠিত ঢাকা-৬ আসন। ঢাকা-৬ আসনে মহাজোটের প্রার্থী কাজী ফিরোজ রশীদ লাঙ্গল প্রতীকে এবং গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেন। আর ঢাকা-১৩ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় আওয়ামী লীগের সাদেক খান ও বিএনপির আবদুস সালামের মধ্যে।

রাজধানীতে অন্য আসনের ভোটকেন্দ্রের সামনে ভোটারদের লম্বা লাইন হলেও ইভিএম কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের লাইন ছোট, কোনো কোনো কেন্দ্রে লাইনই নেই। তবে আঙুলের ছাপ দিতে ঝামেলা হওয়া, ইভিএমের গোপন কক্ষেও কোনো কোনো দলের এজেন্টদের উপস্থিতি এবং ভয়ভীতি দেখানো, দলের প্রতীকের বোতামে চাপ দিতে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন অভিযোগও পাওয়া গেছে এসব কেন্দ্রে। আবার ইভিএম মেশিন–সংক্রান্ত জটিলতা বা মেশিনটি পরিচালনায় কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অদক্ষতায় কিছু কেন্দ্রে ভোট গ্রহণে বিঘ্ন ঘটারও চিত্র দেখা যায়।

এ ছাড়া এত দিন মানুষ হাতে-কলমে সিল মেরে ভোট দিয়ে অভ্যস্ত। হঠাৎ করে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম মেশিনে ভোট দিতে হবে বিষয়টি অনেক ভোটারের মনে কিছুটা অস্বস্তিরও তৈরি করে। সূক্ষ্মভাবে ভোট চুরি করতেই এ ব্যবস্থা কি না তা নিয়েও অনেকে সন্দিহান। তবে যে ভোটারদের আঙুলের ছাপ দেওয়াসহ কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি ওই ভোটারদের মুখে ছিল তৃপ্তির হাসি।

সকাল ১০টার দিকে মোহাম্মদপুরের বেগম নূরজাহান মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চবিদ্যালয় (ঢাকা-১৩–এর ১৮৬ আসনের ৬০ নম্বর) কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, নারী ভোটারদের লাইন একদমই নেই। তবে পুরুষ ভোটাররা লাইন দিয়ে ভোট দিচ্ছেন। এ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা স্বপন কুমার মিস্ত্রী প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ইভিএম মেশিনে ভোট দিতে কম সময় লাগায় নারীদের লাইনই দিতে হচ্ছে না। এ কর্মকর্তার মতে, বাতিল ভোট গণনা করার ঝামেলা নেই। সেই অর্থে হিসাব-নিকাশেরও কিছু নেই। তাই ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফলের প্রিন্ট বের করাসহ কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালনের পর কেন্দ্রের ফলাফল আধা ঘণ্টার মধ্যেই ঘোষণা করা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।এ বিদ্যালয়ের পুরুষ কেন্দ্রের ৮ নম্বর কক্ষে একটি ইভিএম মেশিন সকাল থেকে চালু করা সম্ভব হয়নি বলে ভোট নেওয়া বন্ধ থাকে।

ঢাকা-১৩ আসনে রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ কেন্দ্রে ভোটারদের বেশির ভাগই আসেন বিহারি ক্যাম্প থেকে। এ কেন্দ্রটিতে ভোটার স্লিপ ছাড়া শুধু জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্ট কার্ড নিয়ে গেলে ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে একাধিক ভোটার অভিযোগ করলেন। তবে কেন্দ্রটির (৮৫ নম্বর) প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নায়েব আলী শরীফ বলেন, ভোটারদের ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না, তা নয়। ভোটারদের সুবিধা এবং সময় বাঁচানোর জন্য ভোটার স্লিপটা আনতে বলা হচ্ছে। তা না হলে ভোটারকে সাতটি ভোটকক্ষে ঢুকে স্মার্ট কার্ড মেশিনে ঢোকাতে হচ্ছে, তারপর জানা যাচ্ছে তিনি কোন কক্ষটিতে ভোট দেবেন।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নায়েব আলী শরীফও জানান, ইভিএমে কেন্দ্রের ফলাফল আধা ঘণ্টার মধ্যেই দেওয়া সম্ভব। এই মেশিনে বাতিল ভোটের কোনো কারবার নেই। কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট বের করাসহ কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হবে।

রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে কথা হয় ১৯১৯ সালে জন্ম নেওয়া নাজমুন নেছার সঙ্গে। বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা এ নারী হাসিমুখেই বাংলা ও উর্দুর মিশেলে জানালেন, ভোট দিতে খুবই কম সময় লেগেছে।

ইভিএমের মাধ্যমে একজন ভোটারের ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে । সুরিটোলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঢাকা  ৩০ ডিসেম্বর । ছবি: দীপু মালাকার
ইভিএমের মাধ্যমে একজন ভোটারের ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে । সুরিটোলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঢাকা ৩০ ডিসেম্বর । ছবি: দীপু মালাকার

ঢাকা–৬ আসনে শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় (২৭ নম্বর) কেন্দ্রের পুরুষ ভোটাররা আঙুলের ছাপ দিতে বেশ ঝামেলা পোহাচ্ছিলেন। এক ভোটার তিনবার হাত ধুয়ে পরে ভোট দিতে পারলেন। এ ভোটার বলেন, হাতে তেল লেগে থাকলে বা বিভিন্ন কারণে নাকি ইভিএম মেশিনে আঙুলের ছাপ নিচ্ছে না। তাহলে কেন্দ্রগুলোতে ভালো করে হাত ধোয়ার জন্য সাবান রাখা দরকার ছিল। এউ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শহীদুর রহমান খানও এ সমস্যার কথা স্বীকার করলেন। তিনি জানালেন, হাত ধোয়ার পরও যদি কোনো ভোটারের আঙুলের ছাপ না নেওয়া যায় তখন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাঁর নিজের আঙুলের ছাপ দিয়ে সংশ্লিষ্ট ভোটারের ব্যালট পেপারটি চালু করে দিচ্ছেন।

এ কেন্দ্রে বেসরকারি চাকরিজীবী শান্তনু সাহা ও রাকেশ সাহা আঙুলের ছাপ দিতে জটিলতার কথা জানালেন, তবে এটাও বললেন যে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আন্তরিক বলেই একেক ভোটারের পেছনে অনেকটুকু সময় দিচ্ছেন।

এই কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়ারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শিমুল চন্দ জানালেন, সকাল থেকে কেন্দ্রটিতে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট গ্রহণ চলেছে। তবে পুরুষ ভোটারদের একটি বুথের সামনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর দুজন সমর্থককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। গলায় কার্ড ঝোলানো দুজনকে দেখা গেল তাঁরা গোপনকক্ষের কালো কাপড়ের ওপর দিয়ে উঁকি মারছেন, ভোটার কাকে ভোট দেন তা দেখার জন্য। একজন পুরুষ ভোটার বুথ থেকে বের হয়ে খানিকটা রাগ করেই বললেন, ‘আমার মা লাঙলে ভোট দিছে। এই যে আমার হাতের ভোটার স্লিপও লাঙলের। তাইলে আর এইভাবে আপনারা দাঁড়াইয়া আছেন কেন?’

সকাল আটটা ২৫ মিনিটে পুরান ঢাকার পোগোজ স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভোট দিতে আসেন কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী আকাশ সেন। প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পেরে তিনি ছিলেন উচ্ছ্বসিত। বললেন, ‘সকালে হাঁটতে বেরিয়ে ভোট দিতে গেলাম। মাত্র ৩০ সেকেন্ডেই ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। ইভিএমে ভোট দেওয়া বেশ সহজ।’

সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হলেও এই কেন্দ্রে সাড়ে আটটা পর্যন্ত একটি বুথের ইভিএম চালু করা যায়নি। কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বৈদ্য জানান, কেন্দ্রটিতে মোট ভোটার দুই হাজার ৪৭৭ জন।

সুরিটোলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল নয়টায় ভোট দিতে আসেন ৭০ বছর বয়সী বদির উদ্দীন। বেশ কয়েকবার চেষ্টার পরও তাঁর আঙুলের ছাপ নেওয়া যাচ্ছিল না বলে বিরক্তি প্রকাশ করেন।

সেন্ট গ্রেগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইভিএম কেন্দ্রে কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীকে ঢুকতে বাধা দেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের কয়েকজন সমর্থক। গণমাধ্যমকর্মীরা নির্বাচন কমিশনের পরিচয়পত্র দেখালেও তাঁদের সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।