টিসিবির কার্ড কীভাবে পাবেন জানেন না তাঁরা, ফিরছেন খালি হাতে
চট্টগ্রামে আজ রোববার থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। তবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও কার্ড না থাকায় অনেকে পণ্য নিতে পারছেন না। কীভাবে কার্ড পাবেন, তাও জানেন না তাঁরা। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলছেন, আর্থিক অবস্থা দেখে কাউন্সিলররাই তালিকা অনুসারে কার্ড বিতরণ করছেন।
টিসিবির পণ্য নিতে এসে হালিমা খাতুন জানতে পেরেছেন, কার্ড ছাড়া পণ্য পাবেন না। কার্ড না থাকায় তিনি ফিরে যান খালি হাতে। তাঁর বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। থাকেন চট্টগ্রাম নগরের তুলাতলী এলাকার একটা বস্তিতে। পরিবারের সদস্য বলতে এক ছেলে। সেও বেকার। একাজ–ওকাজ করে সংসার চালান হালিমা।
হালিমা খাতুন বললেন, কোনোরকমে বেঁচে আছেন তিনি। সংসার চলে না। আয় কম। জিনিসপত্রের দাম বাড়তি। আগে টিসিবির ট্রাক থেকে তেল, ডাল, পেঁয়াজ কিনতেন। এখন সেটিও সম্ভব হচ্ছে না।
কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হালিমা খাতুন। বলেন, ‘কেউ আমার সঙ্গে কার্ডের বিষয়ে যোগাযোগ করেননি। আমি জানতামও না কার্ডের ব্যাপারে। এসব বিষয়ে আমি বুঝি না। আগে ট্রাকের পেছনে লাইনে দাঁড়িয়ে কিনতে পারতাম। এখন পারছি না।’
শুধু হালিমাই নন, কার্ড না পাওয়া এমন আরও চারজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। বেলা ১১টার দিকে নগরের ২ নম্বর গেট এলাকার সামারা কনভেনশন সেন্টারে তাঁরা এসেছিলেন। কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ফিরেছেন খালি হাতে। তাঁদেরই একজন বকুল রানী শীল। নগরের কসমোপলিটন এলাকার বাসিন্দা তিনি। বয়স পঞ্চান্নর কম নয়। তাঁর স্বামী শারীরিকভাবে অসুস্থ। আয় নেই। এক ছেলে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে কাজের সন্ধান করছেন। বকুল রানী শীল বলেন, কার্ডের জন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তিনি। কিন্তু পাননি।
টিসিবির কার্ড পাননি—এমন কয়েকজন অভিযোগ করেন, কাউন্সিলর ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের পরিচিত ব্যক্তিরাই কার্ড বেশি পাচ্ছেন। তবে তাঁরা কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
অনেকে কেন কার্ড পাচ্ছেন না, জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মু. মাহমুদ উল্লাহ কার্ড নেওয়ার প্রক্রিয়ার বিষয়ে বলেন, টিসিবির কার্ড নেওয়ার সুযোগ নেই। সিটি করপোরেশনে ওয়ার্ড কাউন্সিলদের মাধ্যমে তালিকা করে কার্ড বাসায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কাউন্সিলরা তালিকা করছেন আর্থিক অবস্থা দেখে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীই প্রাধান্য পাচ্ছেন। পাশাপাশি ওয়ার্ডগুলোতে একটি কমিটিও করে দেওয়া হয়েছে। কাউকে নিজ থেকে এসে যোগাযোগ করতে হচ্ছে না। তবে যাঁরা কার্ড পাচ্ছেন না, তাঁদের বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করা হবে।
এ বিষয়ে মু. মাহমুদ উল্লাহ বলেন, তিনি কয়েকটা জায়গা থেকে এ অভিযোগ পেয়েছেন। তাঁদের লোকজন মাঠে আছেন। বিষয়টি ‘কারেকশনের’ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চট্টগ্রামে আজ থেকে আবারও সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করছে টিসিবি। নগরের ৪১টি ওয়ার্ড ও ১৫টি উপজেলায় তেল, চিনি, মসুর ডাল বিক্রি হওয়ার কথা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সামারা কনভেনশন সেন্টারে বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলায় ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮২টি পরিবারকে টিসিবির পণ্য কিনতে কার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। প্রথম কিস্তিতে নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে পণ্য বিক্রয় হবে। প্রতিদিন অন্তত ৫০০ পরিবার পণ্য পাবে। প্রতিটি পরিবার ১১০ টাকা দামে ২ লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা দামে ২ কেজি চিনি, ৬৫ টাকা দামে ২ কেজি মসুর ডাল একসঙ্গে কিনতে পারবে। নগরের বাইরে ১৫টি পৌরসভা ও ১৫ উপজেলায় পণ্য বিক্রয় চলবে। উদ্বোধনী আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোরশেদুল আলম প্রমুখ।