টার্কি চাষে সংসারে সচ্ছলতা ফিরছে
বাবার মৃত্যুর পর বেকার আলমগীর হোসেন ভেবে পাচ্ছিলেন না কী করবেন। সংসার কী করে চালাবেন। পরে বাড়িতে মুরগির একটি খামার করেন। কঠোর পরিশ্রম করেও যা আয় করতেন, তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলছিল না। সাত-আট মাস আগে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে টার্কি পাখির চাষবিষয়ক অনুষ্ঠান দেখেন। টার্কি চাষের ব্যাপারে তিনি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এরপর বাচ্চা সংগ্রহ করেন। মাত্র ছয় মাস হলো এই টার্কির খামার করেছেন। এরই মধ্যে ঘুরতে শুরু করেছে তাঁর জীবনের চাকা। সচ্ছলতা ফিরছে তাঁর সংসারে।
আলমগীর হোসেনের (৩৭) বাড়ি ঝিনাইদহ শহরের হামদহ (ইসলামপাড়া) এলাকায়। সাত বছর আগে তাঁর বাবা আবেদ আলী বিশ্বাস মারা যান। মা হাসিনা বেগম, স্ত্রী নাজমুন নাহার, ছোট বোন মুক্তা, স্ত্রী ও ১১ বছরের ছেলে অনিককে নিয়ে তাঁর সংসার। অনিক চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট বোন নাহার পড়েন ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে। সবার খাওয়া-পরার জোগান দেন তিনি।
আলমগীর বলেন, বাবার মৃত্যুর পর গোটা সংসার তাঁর কাঁধে এসে পড়ে। মাঠে তাঁদের মাত্র ৩৩ শতক জমি ছিল। সেই জমিতে তেমন কোনো ফসলও হতো না। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। হাতে তেমন কোনো পুঁজিও ছিল না। চার বছর আগে নিজের বাড়িতে মুরগির খামার করেন। সেখানে ছয় শতাধিক মুরগির লালন-পালন করতেন। ওই খামার থেকে যে আয় হতো, তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলত। সাত-আট মাস আগে টেলিভিশনে টার্কি মুরগি চাষের সম্পর্কে একটি অনুষ্ঠান দেখেন। এরপর বহু খোঁজাখুঁজির পর মাগুরা জেলা থেকে চার মাসের ৬০টি বাচ্চা সংগ্রহ করেন। আগের খামারের খাঁচা তাঁর ছিলই। সেখানেই গড়ে তোলেন অনিক টার্কি ফার্ম। মাত্র দুই মাস পরই স্ত্রী জাতীয় টার্কি ডিম দিতে শুরু করে। বর্তমানে তাঁর খামারে ২০টি বড় টার্কি ও ৮৩টি বাচ্চা রয়েছে। ৮৪টি ডিম ফোটাতে দিয়েছেন, বাড়িতে ডিম আছে আরও ২২টি।
টার্কি চাষ সম্পর্কে আলমগীর হোসেন বলেন, একটি ডিম মেশিনে দিলে ২৪ দিন পর বাচ্চা হয়। আর মুরগির তায়ে বাচ্চা ফোটালে লাগে ২৭ দিন। এই বাচ্চা ছয় মাসের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয়। এ সময় ওজন হয় ৭ থেকে ১০ কেজি। পাশাপাশি স্ত্রী পাখি ডিম দিতে শুরু করে। একটি স্ত্রী টার্কি মাসে ২২ থেকে ২৫টি ডিম দেয়। এভাবে দুই বছর পর্যন্ত ডিম দেয়।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ১ থেকে ১০ দিনের বাচ্চা ১ হাজার টাকা জোড়া বিক্রি হচ্ছে। আর ১০ থেকে ২০ দিনের বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। ৬ মাসের টার্কি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায়। এক হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। আলমগীর বলেন, বাজারদর কোনো কোনো সময় একটু ওঠানামা করে। তবে টার্কি চাষ করে তিনি লাভবান হচ্ছেন। ইতিমধ্যে তাঁর সংসার ভালোভাবে চালাতে পারছেন। কিছু টাকাও জমিয়েছেন।