টাঙ্কি পাহাড়ে বসবাসের ঝুঁকি ফায়ার সার্ভিসের সতর্কবার্তা
বান্দরবানের জেলা শহরের ইসলামপুর টাঙ্কি পাহাড়ে ধসের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ৫০টি পরিবার। অগ্নিনির্বাপণ সংস্থা ফায়ার সার্ভিস ওই পাহাড়কে অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে দ্রুত সরে যাওয়ার অথবা সরিয়ে নেওয়ার জন্য সতর্কবার্তা জারি করেছে। ফায়ার সার্ভিস বলছে ভারী বর্ষণে ওই এলাকায় পাহাড়ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। গত শনিবার ফায়ার সার্ভিস ওই এলাকায় মাইকিং করে বাসিন্দাদের সরে যেতে অনুরোধ করেছে।
গতকাল বুধবার অগ্নিনির্বাপণ সংস্থার স্টেশন কর্মকর্তা ফরহাদ উদ্দিন গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেছেন, টাঙ্কি পাহাড়ে শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে যাওয়া ঝরনা ও খাঁড়া দুই পাড় দখল করে কিছু পরিবার বাসাবাড়ি নির্মাণ করেছে—যা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
ফরহাদ উদ্দিন আরও বলেন, গত শনিবার কয়েক ঘণ্টার হালকা বৃষ্টিপাতেই কয়েকটি ঝরনার খাঁড়া পাড় ধসে পড়েছে এবং ঝরনার ওপর নির্মিত বাড়ি পানির প্রবাহে ভেসে গেছে। যেকোনো সময় ভারী বৃষ্টি হলে সেখানে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য ভারী বৃষ্টির আগে ওই পরিবারগুলোকে দ্রুত সরে যাওয়ার জন্য অথবা সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হয়েছে।
টাঙ্কি পাহাড়ে গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ম্যাক্সি খালের পশ্চিম পাশে খাঁড়া পাহাড়ে একটি ঝরনা শঙ্খ নদে গিয়ে পড়েছে। ওই ঝরনা ও ঝরনার অতি খাঁড়া দুই পাড় দখল করে প্রায় ৫০টি পরিবার বাসাবাড়ি নির্মাণ করে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। ঝরনার খাঁড়া পাড়ে কারও কারও বাড়ির কিছু অংশ ইতিমধ্যে ধসে পড়েছে।
ঝরনা দখল করে নির্মিত বাসায় ভাড়া থাকেন আয়েশা আক্তার ও রহিমা বেগম। আয়েশা আক্তার বলেন, রিকশাচালক স্বামীর আয়ে দুই হাজার টাকা বাসা ভাড়া দিয়ে পরিবার চালাতে হয়। মৃত্যুর ভয় রয়েছে জেনেও এখানে থাকছেন, কারণ অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
আয়েশা আক্তার আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তাঁদের বলে গেছেন বাসা থেকে চলে যেতে। কিন্তু কোথায় তাঁরা যাবেন বলেননি।
ঝরনার খাঁড়া পাড়ে বসবাসকারী সোহরাব শিকদারের বাসার একাংশ ধসে পড়েছে। তিনি বলেছেন, ভারী বৃষ্টি হলে তাঁর বাসাসহ দুই পাড়ে আরও আট-নয়টি পরিবারে বাড়ি ধসে পড়বে। ঝরনায় থাকা ছয়-সাত পরিবারের বাড়ি ভেসে যাবে। কিন্তু তাঁরা গরিব মানুষ। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। সরে যাওয়ার জন্য জায়গা দিতে প্রশাসনের কাছে দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
টাঙ্কি পাহাড় জামে মসজিদের ইমাম মো. সিরাজুল ইসলাম ও প্রবীণ গোলাম সোবহান বলেছেন, লাঙ্গিপাড়া ইউকে চিং বীরবিক্রম সড়ক পানির টাঙ্কি পর্যন্ত এলাকায় ঝরনার পাড়ে বসবাসরত কারও বাসাবাড়ি থাকবে না। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে থাকা ৫০টি পরিবার এখনই সরে না গেলে বর্ষা মৌসুমে দুর্ঘটনার শিকার হবে।
বান্দরবান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম বলেছেন, ৫০–এর অধিক পরিবারকে টাঙ্কি পাহাড় এলাকা থেকে সরে যাওয়ার জন্য কয়েকবার বলা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ১২-১৫টি পরিবারকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া দরকার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নোমান হোসেন বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারীদের বর্ষার আগে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।