দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন
‘ঝুঁকিপূর্ণ’ কালুরঘাট সেতুই ভরসা
পুরোনো কালুরঘাট সেতু সংস্কারে বুয়েটের পরামর্শক নিয়োগের সিদ্ধান্ত। নতুন সেতু নির্মাণে হবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ আগামী বছরের ডিসেম্বরের আগেই শেষ হওয়ার কথা। এরপরই চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে ট্রেন আসা-যাওয়া করবে। কিন্তু রেলের এই স্বপ্নযাত্রায় গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে কর্ণফুলী নদীর ওপর ১৯৩১ সালে নির্মিত কালুরঘাট সেতু। নতুন সেতুর কার্যক্রম কিছুটা এগোলেও নকশা জটিলতায় থমকে আছে। ফলে জীর্ণ সেতুটিই এখন ভরসা।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি কীভাবে সংস্কার ও ব্যবহার উপযোগী করা যায়, সে জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দ্বারস্থ হতে যাচ্ছে রেলওয়ে। আর মেরামতের পর ওই সেতু দিয়ে চলবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের ট্রেনগুলো। নতুন সেতু নির্মাণকাজ প্রক্রিয়া পুরোপুরি সম্পন্ন করতে ৬-৭ বছরের বেশি সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করছেন রেলওয়ের প্রকৌশলীরা।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, কালুরঘাট সেতু ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। সেতু দিয়ে ১০ টনের ওপরে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। অবশ্য প্রকৌশলীরা বলছেন, সংস্কারের পর সেতুটি ১৫ টন পর্যন্ত ভার নিতে পারবে। সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে চার জোড়া ট্রেন চলাচল করে। তবে করোনা বিধিনিষেধের কারণে এখন বন্ধ রয়েছে
ট্রেন চলাচল।
বুয়েটকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলের পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) মো. আহসান জাবির। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। এ জন্য বিদ্যমান সেতুটি সংস্কার করতে বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বুয়েটের পরামর্শক দল যেভাবে পরামর্শ দেবে, সেভাবে সেতুটি মেরামত হবে। সেতুটি আরও অন্তত ১০ বছর ব্যবহার উপযোগী রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট এলাকায় নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাঁদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানান স্থানীয় সাংসদ মঈন উদ্দীন খান বাদলও। ওই বছরের ৭ নভেম্বর তিনি মারা গেলে সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়াও থমকে যায়।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল ও সড়ক সেতুর জন্য নকশা প্রণয়ন করা হয়েছিল। তখন নদী থেকে সেতুটির উচ্চতা ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৬ মিটার। ২০১৮ সালের প্রস্তাবিত এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ১৫১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে নকশা ও বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার পর সেতুর উচ্চতা নিয়ে আপত্তি দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটি ১২ দশমিক ২ মিটার উঁচুতে সেতু নির্মাণের অনুরোধ জানায়।
এদিকে গত ৩০ মে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা অনুবিভাগ থেকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) মো. আহসান জাবির প্রথম আলোকে বলেন, কালুরঘাটে রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণের জন্য নতুন করে নকশা প্রণয়ন ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হবে। এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে নতুন সেতু নির্মাণে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, কালুরঘাট সেতুতে রেললাইনের কয়েকটি অংশে পাথর সরে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সেতুর দুই পাশে থাকা কিছু কাঠের পাটাতন নষ্ট হয়ে পড়েছে। কোথাও এই পাটাতনও নেই। লোহার পাতে মরিচা ধরেছে। এর মধ্যেই চলাচল করছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন চালুর আগেই কালুরঘাটে নতুন সেতুর কাজ শেষ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এম শামসুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নতুন রেললাইন দিয়ে এখন ঘন ঘন ট্রেন চলাচল করবে। কিন্তু বিদ্যমান সেতু সে চাপ নিতে পারবে কি না, তা প্রশ্নের বিষয়। তাঁর মতে, নদীর উচ্চতা নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ যে আপত্তি দিয়েছে তা ঠিক আছে। এখন সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বিত উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন সেতুর নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন তিনি।