জুড়ীতে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা, 'চক্রান্ত' দাবি
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় একটি মুরগির খামারে (পোলট্রি ফার্ম) হামলা-ভাঙচুর এবং খামারমালিককে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোঈদসহ (৬০) ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। খামারমালিক দীনবন্ধু সেন বাদী হয়ে গত শনিবার রাতে জুড়ী থানায় এ মামলা করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান সোমবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে এটাকে প্রতিপক্ষের চক্রান্ত বলে দাবি করেন।
এম এ মোঈদ গত বছরের ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন।
এলাকাবাসী, পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম আমতৈল গ্রামে নিজের জমিতে ‘বন্ধু পোলট্রি ফার্ম’ নামে স্থানীয় বাসিন্দা দীনবন্ধু সেনের একটি মুরগির খামার রয়েছে। বছরখানেক ধরে ওই খামার নিয়ে এলাকার দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। স্থানীয় কিছু লোক খামারের দুর্গন্ধে এলাকায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন। খামারমালিক পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, চাঁদা না দেওয়ায় স্থানীয় কিছু লোক তাঁর ব্যবসা বন্ধের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এ ব্যাপারে আদালতে মামলাও রয়েছে।
হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় গত শনিবার করা মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, প্রতিপক্ষের প্ররোচনায় গত শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ কয়েক জন সহযোগীকে নিয়ে ওই খামারে যান। তাঁদের হাতে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ছিল। একপর্যায়ে তাঁরা খামারে হামলা-ভাঙচুর চালান। এ সময় বাধা দিলে উপজেলা চেয়ারম্যান দীনবন্ধুকে পিস্তল দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন। একপর্যায়ে স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহজাহান ভূঁইয়া গিয়ে বাধা দিলে চেয়ারম্যান ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে মারধর করেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এলাকার লোকজন হামলাকারীদের ধাওয়া করেন। এ সময় চেয়ারম্যান স্থানীয় একটি বাড়িতে ঢুকে পড়লে এলাকাবাসী সেখানে তাঁকে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে পুলিশ পাহারায় উপজেলা চেয়ারম্যানকে তাঁর বাসায় পাঠানো হয়। আহত শাহজাহান মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরদিন (শনিবার) রাত ১০টার দিকে দীনবন্ধু বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোঈদসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। হামলা-ভাঙচুরে খামারের প্রায় নয় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ সোমবার বেলা ১১টার দিকে তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে এটাকে প্রতিপক্ষের চক্রান্ত বলে উল্লেখ করেন। তিনি দাবি করেন, শুক্রবার রাতে ধান কাটার যন্ত্র দেখতে পশ্চিম আমতৈলে যান। এ সময় উপস্থিত লোকজন খামারের দুর্গন্ধে পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ করেন। একপর্যায়ে সেখানে দুই পক্ষের মারামারি ও খামারে হামলা হয়। এ অবস্থায় তিনি পাশের একটি বাড়িতে ঢুকে বিষয়টি পুলিশকে জানান। তাঁর হাতে কোনো ধরনের অস্ত্র ছিল না বলে দাবি করেন।
তবে জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার সোমবার বিকেল চারটার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘খামারে হামলা-ভাঙচুরের পর এলাকাবাসী উপজেলা চেয়ারম্যানকে একটি বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। পুলিশ গিয়ে উত্তেজিত লোকজনকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। মামলা হয়েছে। তদন্ত করে এ ব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’