জীবিত থেকেও তাঁরা ‘মৃত’
ভোটার তালিকায় তিনজনকে ‘মৃত’ দেখানো হয়েছে। সম্প্রতি তাঁরা বিষয়টি ঠিক করতে আবেদন করেছেন।
একাডেমিক সনদ অনুযায়ী তাঁর নাম মো. বজলুর রহমান। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রে লেখা আছে বজলুর রহমান। নামের প্রথমে ‘মো.’ জুড়তে তিনি স্থানীয় তথ্যসেবা কেন্দ্রে যান। কিন্তু জাতীয় তথ্যকেন্দ্রে (সার্ভারে) তাঁর কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। শেষমেশ তিনি গেলেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে। গিয়ে জানলেন, তিনি ‘মারা গেছেন’ বেশ কয়েক বছর আগে। তাই তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ গেছে।
যশোরের ঝিকরগাছা পৌরসভার কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা বজলুর রহমান উপজেলার সেন্ট লুইস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক। এ বছরের শেষে তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা। এর মধ্যেই কী করে ভোটার তালিকায় তিনি ‘মৃত’ হলেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।
বজলুরের মতো একই উপজেলার কৃষক আবদুল জলিল এবং গৃহিণী মর্জিনা বেগমও ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ হয়ে আছেন। তাঁরা তিনজনই সম্প্রতি ‘জীবিত’ হওয়ার আবেদন করেছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে।
শিক্ষক বজলুর রহমান বলেন, ২০০৮ সালে তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পান। এরপরে জাতীয় ও স্থানীয় কয়েকটি নির্বাচনে তিনি বিভিন্ন কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২০০৮ সালের পর তিনি নিজে আর ভোট দিতে যাননি। এ বছরের শেষে তিনি অবসরে যাবেন। ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) আওতায় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হবে। এ জন্য সঠিক তথ্য দিয়ে অনলাইনে ইএফটি ফরম পূরণ করতে হচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্রে তাঁর নাম সঠিক নেই। নাম সংশোধনের জন্য তিনি প্রথমে স্থানীয় তথ্যসেবা কেন্দ্রে যান। পরে গত ১৭ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে নিজের ‘মারা যাওয়ার’ খবর জানতে পারেন। তাঁকে জানানো হয়, ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে তাঁর ‘মৃত্যু’ হয়েছে। ওই দিনই তিনি তাঁর ‘মৃত স্ট্যাটাস’ পরিবর্তন করে ভোটার তালিকায় নাম পুনরায় অন্তর্ভুক্তির জন্য নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছেন।
ঝিকরগাছা উপজেলার মাগুরা গ্রামের কৃষক আবদুল জলিলের বয়স এখন ৬০। ২০০৮ সালে তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র পান। ভোটও দিয়েছেন জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে। কিন্তু ২০১৬ সালে মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি তিনি। তখন মনে করেছিলেন, ভুল করে হয়তো কেন্দ্রের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম আসেনি। এরপর ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৯ সালের ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও তিনি ভোট দিতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে অবশেষে তিনি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। সেখানে গিয়েই নিজের ‘মৃত্যুর’ খবর পান।
আবদুল জলিল বলেন, ‘অফিসে গেলে আমাকে বলে, “তুমি তো মরে গিছাও। কম্পিউটারে তুমাকে মৃত ঘোষণা করেছে।” পুনরায় জীবিত হওয়ার জন্য আমি গত ১৯ জানুয়ারি অফিসে কাগজপত্র জমা দিছি।’
ভোটার তালিকার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালর ২ জানুয়ারি মারা গেছেন ঝিকরগাছার কামারপাড়া গ্রামের মর্জিনা বেগম। তালিকায় মৃত থেকে ‘জীবিত’ হওয়ার জন্য তিনিও গত ১৯ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছেন।
উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ওই তিনজনের তথ্য পুনরায় ভোটার তালিকাসংক্রান্ত সার্ভারে পুনঃস্থাপনের জন্য গত ২০ জানুয়ারি যশোর জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে ঝিকরগাছা উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা অপূর্ব কুমার বিশ্বাস বলেন, তালিকায় ‘মৃত’ হওয়া বজলুর রহমান ও আবদুল জলিলের বিষয়ে কোনো তথ্য অফিসে পাওয়া যায়নি। তবে মর্জিনা বেগমের কর্তন ফরম-১২ (ভোটার তালিকার নাম কর্তনের আবেদন) পাওয়া গেছে।
যশোর জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, তিনজনের নাম ভোটার তালিকায় পুনরায় অন্তর্ভুক্তির জন্য সুপারিশসহ আবেদনপত্র নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে পাঠানো হয়েছে।