জাপা থেকে বিএনপিতে ফিরে আলোচনায় রোকন
২০১৪ সালে লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক থাকা অবস্থায় জাতীয় পার্টিতে (জাপা) যোগ দিয়েছিলেন রোকন উদ্দিন বাবুল। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়নের সবুজ সংকেত পেয়ে জাপা ছেড়ে ফিরে গেছেন বিএনপিতে। দলের সদস্যপদ পাওয়ার পাশাপাশি পেয়েছেন বিএনপির মনোনয়নও। তবে তাঁর সঙ্গে আরও তিনজনকে লালমনিরহাট-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।
জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনয়ন পেলেও রোকনের এভাবে দল বদল করে বিএনপিতে ফেরায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আলোচনা-সমালোচনার পাশাপাশি কেউ কেউ বলছেন, ভোটের রাজনীতিতে এটাই ‘চরম বাস্তবতা’। শেষ পর্যন্ত রোকন উদ্দিন, নাকি অন্য কেউ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এবারের সংসদ নির্বাচন করবেন, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনার শেষ নেই।
এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ও লালমনিরহাট-২ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাওয়া রোকন উদ্দিন বলেন, ‘আমার সাংগঠনিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্ট থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন লাভের বিষয়ে সবুজ সংকেত পেয়েই জাপা থেকে পদত্যাগ করে বিএনপির দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়ে দাখিল করেছি।’
লালমনিরহাট-২ আসনে রোকন উদ্দিন ছাড়াও বিএনপির চিঠি পেয়ে দলীয় মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু, কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি সালেহ্ উদ্দিন আহম্মেদ হেলাল।
লালমনিরহাট-২ আসনটি ১৯৮৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত একটানা ছয়বার জাপার দখলে ছিল। এ প্রেক্ষাপটে জাপার প্রার্থী মহাজোটের চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলে সুবিধা করতে পারতেন। কিন্তু সেটি না হওয়ায় জাপার মনোনয়ন পেয়েও দল বদল করতে হলো রোকন উদ্দিনকে।
বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া আরেক প্রার্থী সালেহ্ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ২০১৪ সালের ১১ জুন রোকন বিএনপি থেকে জাপায় যোগদান করেন। এ অবস্থায় দুই উপজেলার বিএনপিকে তিনিসহ অন্যরা সাংগঠনিকভাবে ধরে রেখেছিলেন। রোকন উদ্দিন বর্তমান সরকারের একটা বিশেষ সময়ে নিজের সুবিধার জন্য দল বদল করে জাপায় যান। আবার এখন নিজের সুবিধার জন্যই বিএনপিতে ফিরে এলেন। সালেহ্ উদ্দিন বলেন, ‘আমি তো এই আসনে দুবার ভোট করেছি। কেন্দ্র আমাকে এবারও মূল্যায়ন করবে বলে আশাবাদী।’
রোকন উদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে পরিচিত কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘যিনি নিজের সুবিধা হলো না বলে দুর্দিনে দল ছেড়ে যান আবার সেখানেও সুবিধা হলো না বলে ফিরে এসে সুবিধার তালাশে থাকেন, তাঁর বিষয়ে আর কী বলব? দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কে চূড়ান্ত মনোনয়ন লাভ করেন।’
জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবিব বলেন, ‘আদিতমারী ও কালীগঞ্জের বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের আগ্রহের কারণে আমি লালমনিরহাট-৩ আসনের পাশাপাশি লালমনিরহাট-২ আসনেও দলীয় মনোনয়নপত্র দাখিল করেছি। কেন্দ্রের চূড়ান্ত মনোনয়ন লাভের অপেক্ষায় আছি, যাঁকেই কেন্দ্র থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে, তাঁর জন্যই আমরা কাজ করব।’
আদিতমারী উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবদুল মান্নান সরকার বলেন, ‘জাপার কেন্দ্রীয় নির্দেশনা না পাওয়া গেলে আমরা এই আসনে যার যার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেব। সে ক্ষেত্রে দলত্যাগী রোকন উদ্দিন দলের সবার একচেটিয়া ভোট পাবেন কি না, সেটা এখন বলা যাচ্ছে না। আমরা কেউ তাঁর মতো এখনো দল থেকে পদত্যাগ করি নাই।’