জাতিসংঘে ইউক্রেন ইস্যুতে ভোটদানে বিরত ছিল বাংলাদেশ
এক সপ্তাহ আগে প্রতিবেশী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এর প্রতিবাদে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ একটি জরুরি অধিবেশন ডাকে। আলোচনা শেষে গতকাল বুধবার রাতে সাধারণ পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সমর্থনে রুশ হামলা বন্ধে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। বাংলাদেশ ওই প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল।
অবিলম্বে হামলা বন্ধ করে ইউক্রেনের আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে রুশ সেনাদের সরিয়ে নিতে সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবে ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে ১৪১টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। ভারত, চীন, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ ৩৫টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল। প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয় রাশিয়াসহ পাঁচটি দেশ।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপাল প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়ে সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে মস্কোর মিত্র হিসেবে পরিচিত চার দেশ বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, ইরিত্রিয়া ও সিরিয়া। চীনের সঙ্গে ভোটদানে বিরত ছিল মস্কোর দীর্ঘদিনের মিত্র কিউবা ও নিকারাগুয়া। আর ভেনেজুয়েলা চাঁদার অর্থ না দেওয়ায় ভোট দিতে পারেনি। তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলো মাদুরো কয়েক দিন আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। আর ইউক্রেন ইস্যুতে দেশটি সব সময় রাশিয়ার পাশে থাকবে বলেও জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাধারণ পরিষদের আজকের প্রস্তাবে একটি সত্যের প্রতিফলন ঘটেছে। সেটা হলো, বিশ্ব ইউক্রেনের ভয়ংকর মানবিক যন্ত্রণার অবসান চায়। অবিলম্বে শত্রুতা বন্ধ করতে এবং শান্তির জন্য জরুরি আলোচনায় অবদান রাখার জন্য আমি আমার ক্ষমতার সবকিছুই করে যাব।’
সাধারণ পরিষদের তিন দিনের বিশেষ জরুরি অধিবেশন শুরু হয় গত সোমবার। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন বন্ধের প্রস্তাবে গতকাল অবিলম্বে ও শর্তহীনভাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইউক্রেনের সীমানা থেকে রাশিয়ার সব ধরনের সেনাসদস্যদের সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানায় জাতিসংঘ।
সাধারণ পরিষদে ডাকা জরুরি বৈঠক শুরুর পরদিন গত মঙ্গলবার বিতর্কে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের নেতৃত্বে সংলাপের মাধ্যমে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দেয়। এর পাশাপাশি জাতিসংঘ সনদে বর্ণিত সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় অখণ্ডতার নীতির প্রতিও সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বাংলাদেশ।
এর আগে ইউক্রেন প্রশ্নে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে নিন্দা প্রস্তাবে রাশিয়ার ‘ভেটোর’ কারণে তা বাতিল হলে বিষয়টি আলোচনার জন্য সাধারণ পরিষদে স্থানান্তরিত হয়। বৈঠকের প্রথম দিনে বিতর্ক শুরু করে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, যথেষ্ট হয়েছে, ইউক্রেনে হামলা এখনই বন্ধ করতে হবে।
জাতিসংঘে বিতর্কে বাংলাদেশ যা বলেছে
মঙ্গলবার জাতিসংঘে বিতর্কের দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া হয়। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের উপপ্রধান মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন তাঁর বক্তব্যে কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে আহ্বানের পাশাপাশি যুদ্ধপীড়িত অঞ্চল থেকে সরে যেতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ সময় নিউইয়র্কে অবস্থান করলেও জাতিসংঘের এই বিতর্কে অংশ নেননি। একটি স্থানীয় বাংলা টিভির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব রকম যুদ্ধের বিরুদ্ধে। জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হোক, আমরা সেটাই চাই।’ তিনি জানান, ক্ষুদ্র দেশ হিসেবে সব রকম যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক সংকট বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী।