জমজমাট ঘুড়ি উৎসব
নাম ‘দুই শূন্য শূন্য ছয় পরিবার’। ২০০৬ সালে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সংগঠন। তাঁদের উদ্যোগে গতকাল শনিবার জেলা শহরের জালাল স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয়েছিল ঘুড়ি উৎসবের। নীল আকাশে ঘুড়ি উড়িয়ে রঙিন একটা দিন উপভোগ করেন ছোট-বড় সবাই।
আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে সংগঠনটি হবিগঞ্জে বসন্তবরণ ও ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করে আসছে। গতকালের উৎসবটি শুরু হয় সকাল সাড়ে ১০টায়। সদর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। প্রতিযোগিতায় নার্সারি থেকে একাদশ শ্রেণির পাঁচটি ধাপে প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। একই সময় অভিভাবকদের জন্য ছিল কুইজ প্রতিযোগিতা।
বেলা তিনটায় শুরু হয় এ উৎসবের মূল আকর্ষণ ঘুড়ি উৎসব। ছোট-বড় সব বয়সের মানুষ তাতে অংশ নেয়। একসঙ্গে সবাই রং-বেরঙের ঘুড়ি ওড়ালে কিছু সময়ের জন্য আকাশটা রঙিন হয়ে ওঠে। তা দেখে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে উপস্থিত সবাই।
উৎসবে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী শামীম আহমেদ বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে এ উৎসব হয়ে আসছে। এলাকার সব মানুষকে আকর্ষণ করছে এটি। বিশেষ করে শিশুদের আগ্রহ একটু বেশি। তিনি সপরিবারে উৎসব দেখতে এসেছেন। আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এ ধরনের উদ্যোগের জন্য।
আয়োজক সংগঠনের সমন্বয়ক চৌধুরী নিহাদ ইশতিয়াক বলেন, ‘ঘুড়ি আমাদের সংস্কৃতির অন্যতম এক আকর্ষণ। আজকাল শিশুদের অনেকেই ঘুড়ি কী জিনিস বা সেটা আকাশে কীভাবে ওড়াতে হয় তা জানে না। কারণ, সবাই এখন ইন্টারনেট-মুঠোফোন-টেলিভিশন নিয়ে ব্যস্ত। ওই জগৎ থেকে ঐতিহ্যবাহী বিনোদনের জগতে ফেরাতেই তাঁদের এ আয়োজন।
বিকেল সাড়ে চারটায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা চয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জ সদর-৩ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবু জাহির। তিনি বলেন, ‘ঘুড়ি ওড়ানো মধ্য দিয়ে আমরা শিশুকালকে খুঁজে পাই। আমাদের সংস্কৃতির একটি অংশ ঘুড়ি। আমাদের প্রত্যেকের জীবন ঘুড়ির মতো রঙিন হয়ে উঠুক।’ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সাইফ আহসান। অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন হবিগঞ্জের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক শফিউল আলম, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।
সভাশেষে চিত্রাঙ্কন, ঘুড়ি ওড়ানো ও কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া বিকেলে আয়োজন করা হয় এক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার। এতে স্থানীয় শিল্পীরা গান গেয়ে শোনান উপস্থিত হাজারো দর্শককে। সন্ধ্যার পর উৎসব শেষ হয়।