ছেলের লাশসহ মাকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনায় বাস জব্দ
করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে এক ব্যক্তির লাশ নিয়ে তাঁর মাকে জোর করে সড়কের পাশে ফেলে যাওয়ার ঘটনায় দূরপাল্লার আহাদ পরিবহনের সেই বাসটি জব্দ করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার পুলিশ বাগজানা এলাকা থেকে বাসটি জব্দ করেছে। তবে বাসের চালক ও সহকারীকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনছুর রহমান প্রথম আলোকে আহাদ পরিবহনের বাসটি জব্দ করার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ওসি বলেন, আহাদ পরিবহনের বাসটি থানায় আনা হয়েছে। বাসের চালক ও সহকারী পলাতক থাকায় তাঁদের আটক করা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দিবাগত রাতে নওগাঁগামী আহাদ পরিবহনের বাসটি যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসে। বাসটিতে অসুস্থ ছেলে মিজানুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর মা সোহাগী বেগম বাড়িতে আসছিলেন। বাসের ভেতর ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় মারা যান মিজানুর রহমান। বাসের চালক ও সহকারীকে মিজানুর রহমানের মা তাঁর ছেলের মৃত্যুর ঘটনাটি জানান। বিষয়টি জানতে পেরে তাঁরা মিজানুর করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে সন্দেহ করেন। এ কারণে তাঁরা মিজানুরের লাশসহ তাঁর মাকে জয়পুরহাট-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের জয়পুরহাট সদর উপজেলার হিচমি বাজারের সড়কের পাশে রাতেই জোর করে নামিয়ে দিয়ে যান। এই সময় সোহাগী বেগম ছেলের লাশসহ তাঁকে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাসের চালক ও সহকারীর কাছে অনেক অনুরোধ করলেও তাঁরা তা রাখেননি।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট সদর উপজেলার হিচমি বাজারের সড়কের পাশে নামিয়ে দেওয়ার পর সোহাগী বেগম একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ছেলের লাশ নিয়ে বসে ছিলেন। করোনায় মারা গেছেন সন্দেহে কেউ মিজানুরের লাশের কাছে যায়নি। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত মা তাঁর ছেলের লাশের পাশে বসে বিলাপ করছিলেন। পরে স্থানীয় লোকজন ঘটনাটি প্রশাসনকে জানান।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল সাতটার পর জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন চন্দ্র রায় স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তাঁরা মারা যাওয়া ব্যক্তি ও তাঁর মায়ের নমুনা সংগ্রহ করেন। এরপর প্রশাসনের সহযোগিতায় ছেলের লাশসহ বৃদ্ধ মাকে নওগাঁর ধামইরহাটের জাহানপুরে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জয়পুরহাট পুলিশ সুপারের নির্দেশে আহাদ পরিবহনের বাসটি খুঁজে বের করার জন্য অভিযান শুরু করে পুলিশ। পরে পাঁচবিবি থানা-পুলিশ মঙ্গলবার রাতে বাগজানা এলাকা থেকে আহাদ পরিবহনের বাসটি জব্দ করে। বাসের চালক ও সহকারী আগেই পালিয়ে যাওয়ায় তাঁদের আটক করতে পারেনি পুলিশ।
ইউএনও মিল্টন চন্দ্র রায় বলেন, ‘মিজানুর রহমানের মা আমাকে জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে হৃদ্রোগে ভুগছিলেন। মিজানুর তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় তাঁর মেয়েকে দেখতে গিয়েছিলেন। সোমবার রাতে আহাদ পরিবহনের বাসে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা। বাসের ভেতর ঘুমের মধ্যে তাঁর ছেলে মারা যান। বাসচালক ও সহকারী ছেলের মরদেহসহ তাঁকে হিচমি বাজারের সড়কের পাশে নামিয়ে দিয়ে দ্রুত চলে যায়। আমি সকালে ঘটনাটি জানার পরপরই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন মৃত ব্যক্তি ও তাঁর মায়ের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। মা তাঁর ছেলের লাশটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমি ধামইরহাট উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি। এরপর ছেলের লাশসহ মাকে তাঁদের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।’