চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রী হেনস্তার স্ট্যাটাস নিয়ে ছাত্রলীগে দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষ
কয়েক দফা সংঘর্ষে চার কর্মী আহত। তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
ছাত্রী হেনস্তার প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মী। এ স্ট্যাটাসের জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত কয়েক দফা সংঘর্ষে চার কর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিবদমান পক্ষ দুটি হলো চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) ও সিক্সটি নাইন। তাদের মধ্যে সিএফসির নেতা-কর্মীরা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। আর সিক্সটি নাইনের নেতা-কর্মীরা সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। এ ছাড়া বর্তমানে সিএফসির নেতৃত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক। সিক্সটি নাইনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী সিএফসির চার কর্মীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হেনস্তার অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, তাঁরা দুজন ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে গেলে সিএফসির ওই চার কর্মী হেনস্তা করেন। এ চারজন হলেন আরবি বিভাগের মো. জুনায়েদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রুবেল হাসান, দর্শন বিভাগের ইমন আহাম্মেদ ও আর এইচ রাজু।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন সিক্সটি নাইনের কর্মী শিহাব আরমান। তিনি গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দুই ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তিনি। এ নিয়ে স্ট্যাটাসও দেন। মূলত এ ঘটনার জের ধরেই সিএফসির প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের নেতা-কর্মীরা তাঁকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মারধর করেছেন। এটি থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি মূলত দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রীর এবং আরেকটি সাবেক সিটি মেয়রের অনুসারী। করোনাকালেও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তিনবার সংঘর্ষে জড়িয়েছেন বিভিন্ন পক্ষের নেতা-কর্মীরা।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, সিক্সটি নাইনের কর্মী ও বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শিহাব আরমান গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহীদ মিনার থেকে গোলচত্বর এলাকায় হেঁটে আসছিলেন। পথে সিএফসির কর্মীরা তাঁকে মারধর করেন। সেখানে ছিলেন আরবি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীসহ আরও কয়েক জন। পরে সিক্সটি নাইনের নেতা-কর্মীরা রাতে ক্যাম্পাসের শাহজালাল হলের সামনে ও সিএফসির নেতা-কর্মীরা শাহ আমানত হলের সামনে জড়ো হন। এ সময় তাঁদের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়। তবে কেউ আহত হননি। এ ঘটনার জের ধরে গতকাল দুপুরে আবার দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা গিয়ে দুই পক্ষকেই সরিয়ে দেন। সংঘর্ষকালে নাদিম হায়দার নামে সিক্সটি নাইনের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করা হয়। আহত হন আরও দুজন। তাঁরা হলেন সিক্সটি নাইনের মাহমুদ রাফি ও সিএফসির আরাফাত রায়হান।
বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. আবু তৈয়ব বলেন, নাদিমের হাতে ও মাথায় কুপিয়ে জখম করা হয়। রাফি ও আরাফাতের শরীরে লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হয়। তিনজনকেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সিএফসি পক্ষের দাবি, তাদের কর্মী তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বান্ধবীর সঙ্গে শহীদ মিনারে বসে ছিলেন। এ সময় তাঁর বান্ধবীকে শিহাব উত্ত্যক্ত করেন। পরে তাঁরা শিহাবকে প্রতিহত করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সিএফসির নেতা রেজাউল হক বলেন, স্ট্যাটাসের কারণে নয়, উত্ত্যক্ত করায় সিক্সটি নাইনের কর্মীকে প্রতিহত করা হয়েছে। আবার সিক্সটি নাইনের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুই ছাত্রীকে হেনস্তার প্রতিবাদ করে স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে শিহাবকে মারধর করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের উচিত তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, সংঘর্ষের কারণ এখনো উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। ছাত্রীকে ইভ টিজিংয়ের বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি মূলত দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রীর এবং আরেকটি সাবেক সিটি মেয়রের অনুসারী। এ দুটি পক্ষ আবার ১১টি উপপক্ষে বিভক্ত। শিক্ষা উপমন্ত্রীর অনুসারীর মধ্যে রয়েছে চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার ও বিজয়। আর সাবেক সিটি মেয়রের অনুসারীরা হলো সিক্সটি নাইন, ভার্সিটি এক্সপ্রেস, উল্কা, বাংলার মুখ, কনকর্ড প্রভৃতি। এসব উপপক্ষের মধ্যে পান থেকে চুন খসলেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। করোনাকালে আধিপত্য বিস্তার ও আসন নিয়ে তিনবার সংঘর্ষে জড়িয়েছেন বিভিন্ন উপপক্ষের নেতা-কর্মীরা। কোনো ঘটনাতেই জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।