সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতার অসৌজন্যমূলক আচরণ ও হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন চিকিৎসকেরা। আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।
প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি চলার সময় হাসপাতালের চিকিৎসক ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা ছাত্রলীগ নেতা সরোয়ার চৌধুরীর শাস্তির দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন। তাঁরা সরোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানান।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া চিকিৎসকেরা বলেন, নিজ কর্মক্ষেত্রেও তাঁরা নিরাপদ নন। গত বৃহস্পতিবার কর্তব্য পালনকালে ছাত্রলীগ নেতা হাসপাতালের এক শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এরপরও তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাঁরা জানান, চিকিৎসককে হুমকির প্রতিবাদে কর্মসূচিতে সিলেটের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসকেরাও সংহতি জানিয়েছেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক নাহিয়ান মাহমুদ বলেন, চিকিৎসা নিতে এসে চিকিৎসকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়া জঘন্য অপরাধ। এমন ঘটনা চিকিৎসক এবং সেবাপ্রার্থীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করবে।
নাহিয়ান মাহমুদ বলেন, সেবাপ্রার্থীর সন্ত্রাসীর মতো আচরণে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা অন্য রোগীরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক এবং শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা ছাত্রলীগ নেতা সরোয়ারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ, নিরাপদ কর্মস্থলসহ সাত দফা দাবিতে হাসপাতালের পরিচালক ও মেডিকেল কলেজের পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছেন। প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে হাসপাতালের জরুরি সেবাসহ সব সেবা চালু রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে কর্মসূচি চলাকালে হাসপাতালের পরিচালক ও হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সদস্য এবং চিকিৎসকেরা জরুরি বৈঠক করেন।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে এক সহকর্মীর পেটে ব্যথার চিকিৎসা নিতে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান সিলেটের দক্ষিণ সুরমা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সরোয়ার হোসেন চৌধুরী। এ সময় তাঁদের সঙ্গে আরও ১০-১২ জন যুবক ছিলেন। এ সময় হাসপাতালের এক শিক্ষানবিশ চিকিৎসক অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে অপেক্ষা করতে বলেন। এ নিয়ে চিকিৎসক ও সরোয়ারের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তিনি শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলে অভিযোগ ওঠে।
হাসপাতালের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সিলেট কোতোয়ালি থানায় ছাত্রলীগ নেতা সরোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হাসপাতালের পরিচালকসহ একাধিক চিকিৎসক থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। থানায় বিষয়টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে গ্রহণ করেছে।
থানায় মামলা গ্রহণ না করার খবর পেয়ে আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক নাহিয়ান মাহমুদ।
এ বিষয়ে জানতে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ফেরদৌস হোসেনকে বেলা তিনটার দিকে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে ফোন দেওয়া হলে তিনি বিকেল পাঁচটার দিকে ফোন দিতে বলেন। বিকেল পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মিঞার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে বিকেল চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
সিলেট কোতোয়ালি থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. ইসমাইলকে ফোন দেওয়া হলে তিনি বলেন, ‘শুনেছি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানায় এসেছে। অভিযোগের ব্যাপারে বিষয়টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলতে পারবেন।’