আয়োজনটি শুরু হয়েছিল বছর দুয়েক আগে। এরপর করোনা এল, দেশ হারাল এক জাতীয় অধ্যাপককে। বিজয়ী হয়েও পুরস্কারের আগেই মারা গেলেন এক প্রতিযোগী। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদেরও অনেকে পেশাজীবনে প্রবেশ করেছেন, দুজন বুয়েটের শিক্ষকও হয়েছেন। অবশেষে শেষ হয়েছে পুরকৌশলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাঠামো প্রকৌশলের আয়োজন ‘জিপিএইচ ইস্পাত-প্রথম আলো ইন-জিনিয়াস’।
মঙ্গলবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এই আয়োজনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। আয়োজনে একাডেমিক পার্টনার ছিল বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ এবং বুয়েট-জাপান ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার প্রিভেনশন অ্যান্ড আরবান সেফটি।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে, কাঠামো প্রকৌশলচর্চা বিষয়ে সচেতনতা, প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাঁদের আন্তর্জাতিক মানে গড়ে উঠতে অনুপ্রেরণা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ও সদ্য স্নাতকেরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। পুরকৌশল বিভাগ আছে, এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ২২৩টি দলকে নিয়ে শুরু করে ধাপে ধাপে সেরা ১০টি দলকে বাছাই করেন ২৭ জনের বিচারকমণ্ডলী।
দেশবরেণ্য প্রয়াত প্রকৌশলী ও জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী এই প্রতিযোগিতার অন্যতম পরামর্শক। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে মারা যাওয়ার আগে প্রতিযোগিতার একাধিক পর্বে অংশগ্রহণ ছাড়াও নির্দেশনা দিয়েছেন। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সবাই অধ্যাপক চৌধুরীর স্মৃতিচারণা করেন এবং দেশের জন্য তাঁর অবদান তুলে ধরেন। তাঁর ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয় অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার বহুতল ভবন নির্মাণে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের নবীন প্রকৌশলীদের মানসম্মতভাবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। এ-জাতীয় প্রতিযোগিতা সে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কাঠামো প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামিম জেড বসুনিয়াও জামিলুর রেজা চৌধুরীকে স্মরণ করে বলেন, নতুন কিছু জানা ও শেখার আগ্রহ ছিল স্যারের। তিনি আশা করেন, জিপিএইচ-প্রথম আলো এই ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতেও চালু রাখবে।
প্রতিযোগিতায় ৬ষ্ঠ স্থান অর্জনকারী এমআইএসটি টাস্কফোর্স দলের প্রতিযোগী মো. নাফিজুল ইসলাম গত আগস্টে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অনুষ্ঠানে তাঁর স্মরণে এক মিনিট নীরবতাও পালন করা হয়।
প্রথম আলো শুধু পাঠক নয়, পত্রিকার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কিশোর, তরুণ শিক্ষার্থীরা যেন সেরা হতে পারে, সে চেষ্টা করে যাচ্ছে। সে লক্ষ্যে গণিত অলিম্পিয়াড, ফিজিক্স অলিম্পিয়াড, প্রোগ্রামিং কনটেস্ট, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, তারুণ্যের জয়োৎসবসহ নানা আয়োজন করছে। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান তাঁর বক্তব্যে পত্রিকাটির এসব যাত্রার কথা তুলে ধরেন।
তরুণ ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও অনেক অনুপ্রেরণা পাওয়া যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বাসের হাফ ভাড়া অর্জন করে ফেলল। তরুণেরা কোটা পদ্ধতির সংস্কার করে ফেলেছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে তাদের কথাগুলোও আমাদের উৎসাহিত করে। সবাই মিলেই ভালো কিছু করব আমরা।’
‘ইন-জিনিয়াস’ আয়োজনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছড়িয়ে থাকা প্রতিভারা নিজেদের বিকাশের সুযোগ পেয়েছেন বলে জানান জিপিএইচ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ২০৪১ সালে উন্নত দেশ গড়ার যে লক্ষ্য সরকারের, তা পূরণ করতে জিপিএইচ ইস্পাতসহ দেশের জনগণ কাজ করে যাচ্ছে। গর্ব করার মতো কিছু কাজ দেশের উদ্যোক্তারা করেছেন।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রাকিব আহসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রফেশনালদের কাছ থেকে শিক্ষার একটি সেতু হিসেবে কাজ করেছে এই প্রতিযোগিতা। প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করেছেন প্রতিযোগীরা।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ইন-জিনিয়াস প্রতিযোগিতার প্রধান বিচারক খান মাহমুদ আমানত বলেন, প্রথমবারের আয়োজন, সীমাবদ্ধতা ছিল। সবার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে এ সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা যাবে।
জিপিএইচ ইস্পাত-প্রথম আলো ইন-জিনিয়াসের প্রথমবারের আয়োজনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) দল দ্য কনকারার, ১ম রানার্সআপ হয়েছে বুয়েট স্পার্কলার্স, ২য় রানার্সআপ হয়েছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ইনার্শিয়া, চতুর্থ হয়েছে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির দল বিলটেক, পঞ্চম স্থান বুয়েটের দল টিম ডেক্সট্রাস, ষষ্ঠ মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির দল এমআইএসটি টাস্কফোর্স, সপ্তম মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির দল স্পার্কস অব এমআইএসটি, অষ্টম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল সাস্ট ক্রিপ্টানাইট, নবম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল সাস্ট_ইনভিনসিবল এবং দশম হয়েছে ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসের দল টিম ইউআইটিএস। বিজয়ীদের ক্রেস্ট, মেডেল, সনদ ও নগদ টাকা দেওয়া হয়।
প্রথম আলোর যুব কার্যক্রম ও অনুষ্ঠান প্রধান মুনির হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের চেয়ারম্যান আলমগীর কবির, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য চৌধুরী মফিজুর রহমান ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আ ফ ম মফিজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।