চুপচাপ রক্তিমের স্ত্রী সুমনা

রক্তিমের স্বজনের আহাজারি
ছবি: সৌরভ দাশ

সুমনা শর্মা একেবারে চুপ হয়ে গেছেন। কোনো কথা নেই মুখে। চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ। ১৫ দিন নির্ঘুম রাত কেটেছে তাঁর। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে স্বামী রক্তিমকে নিয়ে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) কেটেছে তাঁর দিন। আশায় ছিলেন স্বামী ফিরবেন। সব বন্ধন ছিন্ন করে আজ মঙ্গলবার সকালে অপর পাঁচ ভাইয়ের মতো রক্তিমও না–ফেরার দেশে চলে যান।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউর বাইরে পরিদর্শনকক্ষে চুপচাপ বসে আছেন সুমনা। একমাত্র ছেলে অন্তিক সুশীল স্বজনদের কোলে কোলে ঘুরছে। হাতে চিপসের প্যাকেট। কিন্তু সে খায় না। স্বজনদের কান্না দেখে ছোট্ট অন্তিক ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে কেবল।

পাশে বিলাপ করছেন রক্তিমের শাশুড়ি প্রভা শর্মা। তিনি বলেন, ‘কিডনি লাগলে আমি কিডনি দিতাম। এত কষ্ট করেও বাঁচানো গেল না। আমার মেয়ের কী হবে!’

৮ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের মালুমঘাট এলাকায় পিকআপের ধাক্কায় রক্তিমসহ আট ভাইবোন গুরুতর আহত হন। তাঁরা এ সময় ১০ দিন আগে মারা যাওয়া বাবার শ্রাদ্ধকর্ম সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। এ ঘটনায় আগে পাঁচ ভাই মারা যান। রক্তিম, ভাই প্লাবন ও বোন হীরাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রক্তিমকে শুরু থেকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। আজ সকাল সোয়া ১০টার পর তাঁকে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। আইসিইউর সহযোগী অধ্যাপক প্রণয় কুমার দত্ত জানান, তিনি মাল্টিপল ট্রমায় ভুগছিলেন। আজ লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়া হয়।

রক্তিমের স্বজনের আহাজারি
ছবি: সৌরভ দাশ

রক্তিমের পিসতুতো ভাই পীযূষ মণি বলেন, পুরো পরিবারের ছয়টি লোক একধাক্কায় চলে গেলেন। এটা কীভাবে সইবেন তাঁদের মা।

রক্তিমের মা বাড়িতে রয়েছেন। তাঁকে ছেলের মৃত্যুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। দুদিন আগে তিনি ছেলেকে আইসিইউতে দেখে যান।

ভাই প্লাবন এখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এত বড় দুর্ঘটনায় প্লাবন মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন বলে জানান পীযূষ মণি।

রক্তিম কক্সবাজারের রামু এলাকায় ছোট একটা দোকান চালাতেন। যৌথ পরিবারে তাঁরা বসবাস করতেন। আট ভাই ও দুই বোনের মধ্যে দুই বছর আগে এক ভাই হৃদ্‌রোগে মারা যান। দুর্ঘটনায় আহত অপর বোন হীরা কক্সবাজার ডুলাহাজারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রক্তিমের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় স্বজনেরা। এর আগে ময়নাতদন্তের কথা উঠলে শাশুড়ি আর্তনাদ করে বলেন, ‘আমার ছেলে ১৫ দিন অনেক কষ্ট পেয়েছে। আর কষ্ট দিতে হবে না।’ পাশে তখনো চুপচাপ স্ত্রী সুমনা।