মাঝারি ও সরু চালের পাইকারি মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চালকল মালিকদের বৈঠকে এ দর নির্ধারণ হয়। নতুন দর অনুযায়ী, প্রতিকেজি সরু মিনিকেট চাল ৫১ টাকা ৫০ পয়সা ও প্রতি ৫০ কেজির বস্তা দুই হাজার ৫৭৫ টাকায় বিক্রি করতে হবে। মাঝারি মানের চাল প্রতিকেজি ৪৫ টাকা ও বস্তা দুই হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি করতে হবে।
বুধবার থেকে দেশের সব চালকল মালিককে নতুন এই দামে চাল বিক্রি করতে বলা হয়েছে। কেউ তা না করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বুধবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চালকলগুলোতে নতুন দামে বিক্রি নিশ্চিত করতে ম্যাজিস্ট্রেট ও খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান চালাবেন। তবে এখন মোটা চাল তেমন অবশিষ্ট নেই, এই যুক্তি তুলে ধরে এর কোনো মিলগেট দাম নির্ধারণ করা হয়নি।
# মিলগেটে সরু চালের পাইকারি মূল্য কেজিপ্রতি ৫১.৫০ টাকা
# মাঝারি চাল ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হবে
# বেশি দামে বিক্রি করলে ব্যবস্থা
জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় আমরা চালকল মালিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই দাম নির্ধারণ করে দিলাম। যদি কেউ তা না মানে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চালকল মালিকদের ওই আলোচনায় চালের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। তবে সাধারণভাবে মিলগেট দামের সঙ্গে চালের খুচরা মূল্য এক থেকে দুই টাকা যোগ হয়। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরা ৫৩ টাকার ওপরে কোনো চাল বাজারে বিক্রি করতে পারবেন না বলে সভায় আলোচনা হয়। তবে এ দামও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে এই সপ্তাহের মধ্যে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
চালকল মালিকেরা বলছেন, এই দরে চাল বিক্রি করতে তারা রাজি আছেন। তবে সে জন্য ধানের দাম কমাতে হবে ও সরবরাহ বাড়াতে হবে। বিভিন্ন ফড়িয়া ও ব্যবসায়ীদের কাছে বিপুল পরিমাণে ধান মজুত আছে। এসব মজুত বাজারে আনতে হবে। তাতে ধানের দাম কমবে। এতে চালকল মালিকেরা সরকার নির্ধারিত দামে চাল বিক্রি করতে পারবেন।
চালকল মালিকদের দাবি, এখন ধানের যে দাম তাতে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে চাল বিক্রি করতে গেলে তাদের লোকসান হবে। তবে প্রতি বস্তা ধানের দাম এক শ থেকে দু শ টাকা কমানো সম্ভব, আর তা করলে চালের দামও কমবে।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে সরু ও মাঝারি মানের প্রতি মন ধানের দাম এক হাজার ৩০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দামে ধান কিনে চাল বিক্রি করতে গেলে তাদের লোকসান হয়ে যাবে। তবে সরকার সহযোগিতা করলে ও মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ধানগুলো মুক্ত করলে বাজারে সরবরাহ বাড়বে। এতে দামও কমবে। চালও সরকার নির্ধারিত দামে তারা বিক্রি করতে পারবেন।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে মঙ্গলবার রাজধানীতে সরু চাল ৫২ থেকে ৬০ টাকা, মাঝারি চাল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আর মোটা চাল ৪২ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। গত এক মাসে মোটা চালের দাম প্রায় ছয় শতাংশ বেড়েছে। সরু ও মাঝারি চালের দাম অপরিবর্তিত আছে।
মঙ্গলবারের সভার আগে দেশের ধান-চালের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার নওগাঁ ও কুষ্টিয়াতে খাদ্য মন্ত্রণালয় কয়েক দফা বৈঠক করে। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের নিজের নির্বাচনী এলাকা নওগাঁয় তিনি গিয়ে চালকল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি চালের দাম কমানোর জন্য তাদের অনুরোধ করেন। কুষ্টিয়ায় জেলা প্রশাসকসহ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা চালকল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে চালের দাম কমানোর জন্য আলোচনা করেন।