১২ জেলায় হাইটেক পার্ক
চার বছরে প্রকল্পের কাজ এখনো দরপত্র পর্যায়ে
প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৭ সালে। তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় আরও তিন বছর বেড়েছে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্যে ১২ জেলায় হাইটেক পার্ক স্থাপনের প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৭ সালে। তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ হওয়া তো দূরের কথা, প্রকল্প গ্রহণের প্রায় চার বছর পার হলেও এখনো দরপত্র প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হয়নি। প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, ভারতীয় ঋণের শর্তের কারণে প্রকল্পটির কাজ শুরু হতে দেরি হচ্ছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১ জুলাই ভারতের সঙ্গে দ্বিতীয় ঋণ চুক্তির আওতায় রংপুর, নাটোর, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেটে হাইটেক পার্ক নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৭৯৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ বাবদ ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা এবং সরকারের তহবিল থেকে ২৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের জুনে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শুরু না হতেই করোনাভাইরাসের মহামারি ছড়িয়ে পড়ে। এ জন্য সরকারের নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর (২০২১ সাল পর্যন্ত) বেড়ে যায়। এরপর প্রকল্পটির মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানো হয়েছে। সেই অনুযায়ী ২০২৪ সালের মধ্যে প্রকল্প শেষ করতে হবে। তবে মেয়াদ বাড়লেও প্রকল্পের ব্যয় বাড়েনি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সময় বাড়লে ব্যয়ও বাড়বে। এটা অবধারিত। সময় বাড়া, ব্যয় বাড়া আমাদের দেশের প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিক ঘটনা।মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, সাবেক সচিব ও অর্থনীতিবিদ
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে। এ প্রকল্পের বিবৃতিতে বলা হয়, এটি বাস্তবায়ন করা হলে ৬০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।
প্রকল্পটির প্রথম দুই বছর জমি অধিগ্রহণে যায়। এ ছাড়া প্রকল্পটি ভারতীয় ঋণে হওয়ায় তাতে নানা শর্ত আছে। সেই শর্ত অনুযায়ী দরপত্রে কেবল ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই অংশ নিতে পারবে। প্রথমবার ডাকা দরপত্রে অংশ নেওয়া ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো শর্তগুলো পূরণ করতে পারেনি। তাই সে প্রক্রিয়া বাতিল হয় ২০১৯ সালের শেষ দিকে। নতুন করে চলতি বছর আবার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাই দরপত্র জমাদানের শেষ দিন।
প্রকল্পটির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা প্রকল্প পরিচালক এ কে এ এম ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, অগ্রগতি খুবই কম। জমি অধিগ্রহণ হয়েছে এবং কিছু শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বাড়ানো হয়েছে।
চার বছরেও প্রকল্পের কার্যত কোনো অগ্রগতি না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ক্রেডিট লাইনের (বিদেশি ঋণে) প্রকল্পে কিছুটা দেরি হয়। এখানে নানা শর্ত থাকে। এ ছাড়া এখানে যদি বড় বিনিয়োগ হতো, তাহলে হয়তো আরও তাড়াতাড়ি হতো। ভারতের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাভাবিকভাবেই বড় কাজে বেশি আগ্রহ দেখাবে। আর ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর শর্ত, সক্ষমতা ও নানা কারণেই সব মিলিয়েই আসলে দেরি হয়ে গেছে। তবে দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সাবেক সচিব ও অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সময় বাড়লে ব্যয়ও বাড়বে। এটা অবধারিত। সময় বাড়া, ব্যয় বাড়া আমাদের দেশের প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিক ঘটনা। এই প্রকল্প যেহেতু শর্তযুক্ত ঋণে হচ্ছে, তাই এখানে এই পরিস্থিতিটাই হবে। তবে আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে আমরা খুব বেশি প্রকল্প নিয়েছি। আর্থিক সক্ষমতার বাইরে গিয়েও প্রচুর প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।’