ডিএনএ অধিদপ্তর
চাকরির অনিশ্চয়তায় ৫৪ কর্মকর্তা–কর্মচারী
এনএফডিপিএল যে প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে, সেই প্রকল্পের মেয়াদ আজ শেষ হচ্ছে। ৫৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা।
ডিএনএ পরীক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল করতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০২০ সালের ৯ আগস্ট ডিএনএ ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অধিদপ্তরের জনবল নিয়োগবিধিমালা চূড়ান্ত হয়নি।
অধিদপ্তর গঠিত হলেও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম প্রকল্পের আওতায় ২০০৬ সালে চালু ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি (এনএফডিপিএল) ও আটটি মেডিকেল কলেজের ডিএনএ স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরির কর্মকর্তা–কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে নেওয়া হয়নি। অথচ আজ বৃহস্পতিবার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ১৬ বছর ধরে কর্মরত এসব দক্ষ জনবল না থাকলে অধিদপ্তরের কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউক্লিয়ার মেডিসিন ভবনে ২০০৬ সালে এনএফডিপিএল প্রতিষ্ঠিত হয়। মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম প্রকল্পের আওতায় দেশের আরও আটটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিএনএ স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরি বসানো হয়। শুরু থেকে ৫৪ কর্মকর্তা–কর্মচারী নিয়ে ল্যাবরেটরিগুলো চলছে।
মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নার্গিস খানম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করছি, প্রকল্পের মেয়াদ আরও দেড় বছর বাড়বে। মেয়াদ বাড়লে ৫৪ জন প্রকল্প থেকেই বেতন পাবেন।’
নথিপত্র বলছে, প্রথম তিন মেয়াদের প্রতিবারই প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ল্যাবে কর্মরত জনবল পর্যায়ক্রমে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের কথা উল্লেখ করা হয়। এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে হাইকোর্টও ল্যাবগুলোর জনবলকে রাজস্বে আত্তীকরণের নির্দেশনা দেন। এরপরও চতুর্থ দফা মেয়াদ বাড়িয়ে তাঁদের প্রকল্পের অধীনেই নিয়োগ দেওয়া হয়।
■ ডিএনএ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর চলছে চার কর্মকর্তা দিয়ে। নিয়োগবিধিমালা চূড়ান্ত হয়নি। ■ ২০০৬ সাল থেকে এনএফডিপিএলে ২৪ হাজার ৬৯১টি নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছে।
২০১৪ সালের ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) আইনে উল্লেখ আছে, এনএফডিপিএল এই আইনের অধীনে ‘সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত’ হয়েছে বলে গণ্য হবে। আইনের অধীনে অধিদপ্তর গঠিত হবে এবং অধিদপ্তর ডিএনএ ল্যাবরেটরি, জাতীয় ডিএনএ ডেটাবেইজ প্রতিষ্ঠা এবং এ–সংক্রান্ত কার্যক্রম সমন্বয়, তত্ত্বাবধান, পরিবীক্ষণসহ অন্যান্য কাজ করবে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিএনএ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর গঠনের নির্দেশ দেন। বর্তমানে রাজধানীর বেইলি রোডের জাতীয় মহিলা সংস্থার ভবনে ভাড়া করা দুটি কক্ষে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বসছেন।
৫৪ কর্মকর্তা–কর্মচারীর হতাশা
রাজস্ব খাতে না নেওয়ায় চাকরি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ল্যাবের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। তাঁরা বলছেন, ডিএনএ আইনের অধীনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ল্যাবটি চালু হয় ২০১৪ সালে। ২০১৮ সালে প্রকল্পের জনবল রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তর করা হয়েছে। অথচ তাঁরা এখনো প্রকল্পের অধীনেই রয়ে গেছেন।
ল্যাবের কর্মকর্তারা বলেন, প্রকল্প থেকেই হয়তো তাঁদের বিদায় নিতে হবে। তাঁদের এখন যে বয়স, তাতে চট করে অন্য কোথাও চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (জাতীয় মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক) সাকিউন নাহার বেগম প্রথম আলোকে বলেন, অধিদপ্তরের নিয়োগবিধি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ল্যাবগুলোর ৫৪ জনবলের বিষয়টি ঝুলে আছে। মাত্র চার কর্মকর্তা দিয়ে অধিদপ্তরের কাজও ঠিকমতো চলছে না।
জনবল নিয়ে জটিলতা
ডিএনএ ল্যাবগুলোর মোট ৬৩ কর্মকর্তা–কর্মচারীর মধ্যে সরাসরি নিয়োগ পান ৫৪ জন। ২০১৩ সালে ল্যাবের নির্বাহী বোর্ডের সভায় জনবল যথানিয়মে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৪ সালের ডিএনএ আইনে যোগ্য ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের মাধ্যমে ল্যাবের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলে উল্লেখ আছে। তবে ডিএনএ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রস্তাবিত নিয়োগবিধিতে এই দক্ষ জনবলের জন্য বিশেষ কোনো বিধান রাখা হয়নি। তাঁদের বয়সের বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়নি। অধিদপ্তরের প্রস্তাবিত নিয়োগবিধিতে ল্যাবগুলোর ৫৪টি পদের মধ্যে মাত্র ২৭টি পদের মিল আছে।
গুরুত্ব বাড়ছে ডিএনএ পরীক্ষার
সরকার ২০১৪ সালে ডিএনএ আইন প্রণয়ন করে। দিন দিন ডিএনএ পরীক্ষার গুরুত্ব বাড়ছে। ২০২০ সালে সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগী ব্যক্তির সম্মতি না থাকলেও ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কর্মরত ব্যক্তিরা বলছেন, এতে তাঁদের কাজের চাপ আরও বেড়েছে।
এনএফডিপিএলের তথ্য বলছে, ২০০৬ সালের জুন থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত পিতৃত্ব-মাতৃত্ব নির্ণয়, ধর্ষণ, হত্যা, শনাক্তকরণ, অভিবাসনে ইচ্ছুক, টিস্যু ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য ৭ হাজার ৭৩২টি মামলায় ২৪ হাজার ৬৯১টি নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছে। আর এই সময়ে ধর্ষণের মামলা ছিল ৪ হাজার ৮০৭টি।