চাঁদ সওদাগরের দিঘি
মনসামঙ্গল কাব্যের বেহুলা-লখিন্দর, শিব-মনসা, সনকা-চাঁদ সওদাগর চরিত্রগুলো সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানেন। যে দিঘিটির কথা বলা হচ্ছে, জনশ্রুতি বলে, সেটি চাঁদ সওদাগরের স্মৃতিবিজড়িত। মনসামঙ্গল কাব্যের প্রধান চরিত্র চাঁদ সওদাগর স্থানীয় লোকজনের পানির সমস্যা দূর করতেই নাকি তৈরি করেছিলেন এটি। চট্টগ্রামের আনোয়ারার বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর বন্দর গ্রামে চার একরের বেশি জায়গাজুড়ে অবস্থিত এ দিঘি দেখতে আসেন দর্শনার্থীরা।
চাঁদ সওদাগরের বাস ছিল কোথায়, সে তথ্য ঠিকভাবে কেউ দিতে পারেন না। ইতিহাসবিদদের কেউ কেউ মনে করেন, পাল যুগের একটি চন্দ্র বংশ আরাকান রাজ্য শাসন করে। এই চন্দ্র বংশের প্রভাবশালী রাজা শ্রীচন্দ্রদেবকেই ইতিহাসের চাঁদ সওদাগর বলে মনে করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন, আনোয়ারার বন্দর এলাকার চম্পকনগরে কোটিশ্বর নামক এক রাজার পুত্র ছিলেন চন্দ্রদেব। তাঁর ছিল মধুকর, শঙ্খচূড়া, রত্নাবতী, দুর্গাবর, খরষাং, পাঠানপাগল, গুঞ্জাছড়ি, উদয়তারা, কোড়ামোড়া, কাজলরেখাসহ বিভিন্ন নামের চৌদ্দ ডিঙ্গা। এসব নিয়ে তিনি দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করতেন। তাই তাঁর নাম হয়ে ওঠে চাঁদ সওদাগর। আবার বগুড়া এলাকায়ই অঙ্গদেশে ছিল চম্পকনগর—এ রকম কথাও প্রচলিত রয়েছে। মহাস্থানগড়ের ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং বগুড়া শহরের ৯ কিলোমিটার উত্তরে বগুড়া-রংপুর সড়ক থেকে ১ কিলোমিটার দূরে গোকুল মেধ নামে একটি জায়গায় রয়েছে বেহুলার বাসরঘর।
জনশ্রুতি যা-ই বলুক, আনোয়ারার স্থানীয় লোকজন দিঘিটিকে চাঁদ সওদাগরের দিঘি হিসেবেই মনে করেন। দিঘিটি কোরীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের আওতাভুক্ত এলাকায় পড়েছে। কর্তৃপক্ষ এটিকে রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে। দিঘির পূর্ব পাড় থেকেই লোকালয় ও উত্তর বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
দিঘি নিয়ে লোকমুখে প্রচলিত নানান কথা। উত্তর বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘শুনেছি এলাকার কারও কোনো বিয়েশাদি কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে হাঁড়িপাতিলের প্রয়োজন হলে দিঘির পাড়ে এসে দাঁড়াতে হতো। তখন দিঘির ভেতর থেকে ডুবন্ত সাম্পানে করে প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো চলে আসত। এসব দামি উপকরণ নেওয়া হয়ে গেলে সাম্পানটি আবার ডুবে যেত এবং প্রয়োজন শেষে তা ফেরত দেওয়া হতো। কিন্তু কোনো এক সময় এক বুড়ি লোভে পড়ে সেখান থেকে একটি দামি লবণের বাটি রেখে দিলে ডুবন্ত সাম্পানটি আর কখনো ওঠেনি।’